পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি চুক্তি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ভারতের সঙ্গে ১০টি চুক্তি ও প্রকল্প বাতিলের খবর সঠিক নয়।’ গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করে বলা হয়, ‘হাসিনা সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে করা ১০ চুক্তি বাতিল, বাকিগুলোও বিবেচনাধীন।’ তিনি ভারতের সঙ্গে বাতিল ও বিবেচনাধীন চুক্তি/প্রকল্পগুলোর একটি তালিকাও প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যে তালিকাটি এসেছে, সম্ভবত একজন উপদেষ্টা তা প্রচার করেছেন। হয়তো এটা তিনি না করলেও পারতেন। তবে যে তালিকা সেখানে এসেছে, সেটি সঠিক নয়। এর অধিকাংশ চুক্তিই বাস্তবে নেই। শুধু একটি চুক্তিই বাতিল হয়েছে, সেটি হলো ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি জিআরএসইয়ের সঙ্গে টাগবোট সরবরাহসংক্রান্ত চুক্তি।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম রেলসংযোগ প্রকল্প, অভয়পুর-আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ নামে কোনো প্রকল্প নেই। আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডর নামে নেই কিছু, যে নামে আছে তা হচ্ছে আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেন প্রকল্প, এটার একটা প্যাকেজ বাতিল হয়েছে। ‘ফেনী নদী পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ নামে কিছু নেই, যেটা আছে সেটা একটা সমঝোতা স্মারক, সেটা বাতিল হয়নি। কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন প্রকল্প বলে কিছু নেই, যেটা আছে সেটা একটা সমঝোতা স্মারক। এটি স্থগিত হয়নি। বন্দরের ব্যবহারসংক্রান্ত সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন চুক্তি নামে কোনো চুক্তি নেই। যেটা আছে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য পরিবহন, সেটা বাতিল হয়নি। ফারাক্কা বাঁধসংক্রান্ত প্রকল্পে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাব এ রকম কিছু নেই। সিলেট-শিলচর সংযোগ প্রকল্প নামে কোনো প্রকল্প নেই। পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ চুক্তি এ রকম কোনো চুক্তি হয়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ‘ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল হয়নি, প্রক্রিয়া চলছে। আদানির বিদ্যুৎ নিয়ে যেটা বলা হয়েছে, সেটা মোটামুটি ঠিক আছে। এটা পুনর্বিবেচনার জন্য আলোচনা চলছে। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে। এটা নবায়নের জন্য আলোচনা হবে, যোগাযোগ চলছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। খুব যে অগ্রগতি তা নয়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি জিআরএসইয়ের সঙ্গে টাগবোট চুক্তি আমরা বাতিল করেছি। এটা বিবেচনা করে দেখা গেছে যে বাংলাদেশের জন্য খুব একটা লাভজনক না।’ তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে একটা চুক্তিই বাতিল করেছে। যখন কোনো চুক্তি সই হবে বা বাতিল হবে, তখন আমরা আপনাদের জানাব।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গরু চোর সন্দেহে তিন বাংলাদেশিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ভারতের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর মেলেনি।’