আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনি পরিবেশ মূল্যায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)। এজন্য গত সোমবার ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের জন্য কাজ করা আইআরআই। আন্তর্জাতিক নীতি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এ উচ্চস্তরের মিশনটি গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, জুলাই সনদ ও গণভোট, দল ও সরকারের নির্বাচনি প্রস্তুতি ও কোনো বিষয়ে অস্বস্তি বা প্রত্যাশা আছে কি না জানতে চেয়েছেন আইআরআই প্রতিনিধিরা।
আইআরআই-এর এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর জোহানা কাও বলেছেন, এই মিশনটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমর্থনের জন্য আইআরআই-এর প্রতিশ্রুতিকে আরও স্পষ্ট করে তুলবে। মিশন শেষে আইআরআই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রস্তুতির নিরপেক্ষ মূল্যায়ন, নির্বাচনি অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করবে।
জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে আইআরআই বিশ্বব্যাপী ২৫০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনা করেছে। আইআরআই প্রতিনিধিদল সোমবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত তারা নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিএনপির সঙ্গে বৈঠক : আইআরআই-এর প্রতিনিধিদল গতকাল বেলা ১২টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া বিএনপি প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হক। অন্যদিকে, আইআরআই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইআরআই বোর্ড সদস্য ক্রিস্টোফার ফাসনার এবং সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির (সিএনএএস) ইন্দো-প্যাসিফিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো লিসা কার্টিস।
আইআরআই প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন কারিগরি বিশেষজ্ঞ জেসিকা কিগান, আবাসিক প্রোগ্রাম ডিরেক্টর স্টিভ সিমা, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর (এনডিআই) জেমি স্পাইকারম্যান, প্রচারণা ও পরামর্শদাতা জন ফ্লুহার্টি, পরামর্শদাতা ডারিন বিয়েলেকি, প্রোগ্রাম পরামর্শদাতা অমিতাভ ঘোষ এবং পরামর্শদাতা সাইদা মুশরেফা জাহান। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও আসন্ন নির্বাচনি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
গণঅধিকার পরিষদের বৈঠক : আইআরআই প্রি ইলেকশনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের বৈঠক হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর দ্য ওয়েস্টিনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদ সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক সম্পাদক খাইরুল আমিন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রোকেয়া জাবেদ মায়া বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, আইআরআইয়ের পক্ষ থেকে গণঅধিকার পরিষদের নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে সরকারের নির্বাচনি আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। আমরা বলেছি, সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী ফেব্রুয়ারি সময়সীমা ধরে ঘোষণা করেছে। আমাদের সংস্কার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের কোনো সংঘাত আছে কি না জানতে চাওয়া হয়। আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি একই অপরাধ করেছে। এ দেশের জনগণ জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি ও নির্বাচনে দেখতে চায় না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ জানাই, তারা যেন জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো বৈঠক বা মিটিং না করে। তাদের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। আমরা বলেছি, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে। বাকিরাও করবে বলে আমরা আশাবাদী। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে আমরা শতভাগ একমত না হলেও ৮০ শতাংশ একমতে সব দল আসতে পেরেছি।