ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ঘোষিত আসনের মধ্যে প্রার্থীদের কর্মতৎপরতার পাশাপাশি চলছে কেন্দ্রের গোপন মাঠ জরিপ; যার ভিত্তিতে কিছু আসনে আসতে পারে পরিবর্তন। দলের শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতাদেরসহ ৫০ আসনে বিজয় নিশ্চিত করতে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। যেসব আসনে জামায়াতের অবস্থান ভালো, আগে জয়ী হয়েছে এবং নতুন যেসব আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব আসনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমন বিশেষ কিছু আসনের মধ্যে ৩৯টি এরই মধ্যে বাছাই সম্পন্ন করেছে দলটি। প্রক্রিয়াধীন আছে আরও ১১ আসন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জামায়াতের নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-১৫ আসনে লড়বেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। ইতোমধ্যে এ আসনে ব্যাপক জনসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে প্রার্থী। দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা, দ্বিতীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী। এ আসন থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো সংসদে এসেছিলেন। খুলনার (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রচারে আছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনে জয় পেতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনে প্রার্থী।
বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করবেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল, কারানির্যাতিত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল নির্বাচন করবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে। সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে অ্যাডভোকেট শিশির মনির, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল, বগুড়া-১ আসনে অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, ময়মনসিংহ-৫ আসনে কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ নির্বাচন করবেন।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় দি ত নেতাদের সন্তানদের মধ্য থেকেও এবার প্রার্থী করা হয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিবুর রহমান মোমিন (পাবনা-১), মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী (পিরোজপুর-১) ও বড় ছেলে শামীম সাঈদী (পিরোজপুর-২) এবং মীর কাসেম আলীর ছেলে আইনজীবী মীর আহমদ বিন আরমান (ঢাকা-১৪) আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে জেলা জামায়াতের আমির মো. ইকবাল হোসাইনকে।
দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসন বাছাই করা হয়েছে। যেসব আসনে জামায়াতের জনসমর্থন বেশি এবং দলের শক্ত অবস্থান রয়েছে সেগুলোয় জয় পেতে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের ১৬টি নির্বাচনি আসনের সাতটিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু ), চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। কুমিল্লার ১১টি নির্বাচনি আসনের ছয়টিতে বিশেষ জোর দিচ্ছে জামায়াত। সেগুলো হলো কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর)-এ ইউসুফ হাকিম সোহেল, কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার)-এ সাইফুল ইসলাম শহীদ, কুমিল্লা-৬ (সদর-সদর দক্ষিণ)-এ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ)-এ ড. সৈয়দ এ কে এম সরোয়ার সিদ্দিকী, কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-লালমাই)-এ ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত এবং কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম)-এ দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের মধ্যে নয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। সেগুলো হলো সিলেট-১ মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট-৩ লোকমান আহমদ, সিলেট-৪ জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ আনোয়ার হোসেন খান, সিলেট-৬ মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-২ শিশির মনির, সুনামগঞ্জ-৫ আবদুস সালাম আল মাদানী, মৌলভীবাজার-১ আমিনুল ইসলাম এবং হবিগঞ্জ-১ আসনে মো. শাহজাহান আলী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংগ বিভাগেও আসন বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান নেতারা।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘জামায়াত আসনভিত্তিক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলের পক্ষ থেকে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। সবাই প্রচারে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। তবে এখনো সব আসন বাছাই করা হয়নি।’