নতুন ইতিহাস লিখেছে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম। অনেক রেকর্ডের মালিক হয়েছে বাংলাদেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ স্টেডিয়ামটি। স্পিন আধিক্যের রেকর্ডময় ম্যাচটি সুপার ওভারে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের ম্যাচ বাকি একটি। আগামীকাল একই ভেন্যুতে ম্যাচ শুরু হবে একই সময়ে। যারা জিতবে তারাই সিরিজ ঘরে তুলবে। সেদিনও কি নতুন রেকর্ডের সাক্ষী হবে?
কালো মাটির উইকেটে অনেক রেকর্ডের সাক্ষী হয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, শাই হোপরা। ম্যাচের এক ইনিংসে ৫০ ওভার স্পিন বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আবার এক ম্যাচে সর্বাধিক স্পিন বোলিংয়ের বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে গতকাল। দুই দলের স্পিনাররা সব মিলিয়ে বোলিং করেছেন ৯২ ওভার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং করেছে ৫০ ওভার ও বাংলাদেশ ৪২ ওভার। আগের রেকর্ড ছিল আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে, ৭৮.২ ওভার।
মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নারদের দেখানো পথে বোলিংয়ে আগুনের ফুলকি ছুটিয়েছেন কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশরা। এরা সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক একজন কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার। সত্তর, আশির দশকে এসব পেসার গতি, বাউন্স ও সুইংয়ে বিধ্বস্ত করেছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের ৫২ বছরের (১৯৭৩-২০২৫) ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে গতকাল ৮৯৪ নম্বর ওয়ানডে খেলেছে। এই প্রথম কোনো ইনিংসে পুরো ৫০ ওভারে একজন পেসারও ব্যবহার করেনি দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের ৫০ ওভারই বোলিং করেছে স্পিনাররা। যা ওয়ানডে ক্রিকেটের ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম। সেই বিরল রেকর্ডটির একক মালিক মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি বিরল রেকর্ডের মালিক হয়েছে ১২২ নম্বর ওয়ানডেতে। গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামে টস হেরে ফিল্ডিং করে ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশের ইনিংসে ক্যারিবীয়দের পাঁচ স্পিনার বোলিং করেন ৫০ ওভার। রান দেন ২১৩। ডট নেন ১৯৩টি। অবিশ্বাস্য। মিরপুরের কালো মাটির উইকেটে প্রথম ওয়ানডেতে ক্যারিবিয়রা ডট নিয়েছিলেন ১৮৩। ৩০০ বলের মধ্যে গতকাল ডট বলের শতাংশ ছিল ৬৪.৪৪! মিরপুরের স্পিন উইকেটে ক্যারিবীয় স্পিনাররা চার খেয়েছেন ১৫টি এবং ছক্কা ৭টি। ক্যারিবীয় বোলারদের ঘূর্ণির মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেছেন ওপেনার সৌম্য সরকার। শেষ দিকে রিশাদ হোসেন ১৪ বলে ২৭৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ৩৯ রান করেন ৩টি করে চার ও ছক্কায়। রেকর্ডগড়া ম্যাচে সফরকারী স্পিনারদের মধ্যে অ্যালিক অ্যাথানজে ১০ ওভারের স্পেলে ডট নিয়েছেন ৫০টি।
টার্নিং উইকেট; এমন ধারণা ছিল ক্যারিবীয়দের। কিন্তু লাটিমের মতো বল ঘুরবে এমনটা আশা করেনি। প্রথম ওয়ানডেতে রিশাদের লেগ স্পিনের জাদুতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর দেশ থেকে উড়িয়ে আনে বাঁ-হাতি অভিজ্ঞ স্পিনার আকিল হোসেনকে। এসেই বাজিমাত করেন। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে একাধিক একাদশে পেসার থাকার পরও বোলিং ওপেন করেন আকিল। ইনিংসের ছাড়া বাকি ওভারগুলো করেন রোস্টন চেজ, খারি পিয়েরে, গুদাকেশ মোটি ও অ্যালিক অ্যাথানজে। সফরকারী স্পিনাররা এতটাই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করছিলেন যে, এক সময় ৪৬ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডের ম্যাচসেরা রিশাদ গতকালও ১৪ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।
মিরাজ বাহিনী গতকাল চার স্পিনার দিয়ে একাদশ সাজিয়েছে। প্রথম ওয়ানডে খেলা রিশাদ, তানভির ইসলাম ও মিরাজের সঙ্গে গতকাল খেলেছেন নাসুম হোসেন। এ ছাড়া পঞ্চম স্পিনার হিসেবে রয়েছেন সাইফ হোসেন। চার স্পেশালিস্ট স্পিনার ওয়ানডে খেলেছে সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৬ জুলাই। গায়ানার প্রোভিডেন্সের ম্যাচটিতে কাকতালীয়ভাবে প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৪ উইকেটে ৯ বল হাতে রেখে। ওই ম্যাচে টাইগাররা খেলেছিলেন একমাত্র পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে। গতকালের একাদশেও একমাত্র পেসার ছিলেন মুস্তাফিজ। দিনের হিসাবে বাংলাদেশ পুনরায় চার স্পিনার নিয়ে ওয়ানডে খেলেছে ১ হাজার ১৯৩ দিন পর। ম্যাচটিতে তাইজুল ইসলাম ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। স্পিনারদের মধ্যে যা সেরা বোলিং স্পেল ছিল এতদিন। প্রথম ওয়ানডেতে ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন রিশাদ।
ক্যারিবীয়রা এখন একক রেকর্ডের মালিক। এর আগে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৪ ওভার স্পিন বোলিং করেছিল শ্রীলঙ্কা। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তিনবার ৪৪ ওভার বোলিং করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। মিরপুরে সবচেয়ে বেশি স্পিন করানোর ম্যাচও এটি। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্পিনাররা বোলিং করেছিলেন ৪০ ওভার। গতকাল করেছে ৪২ ওভার।