প্রয়াত হয়েছেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা আসরানি। ৮৪ বছর বয়সে, দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর, গত সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কয়েকদিন ধরেই বুকে ব্যথার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এই বর্ষীয়ান শিল্পী। মুম্বাইয়ের জুহুর আরোগ্য নিধি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, শারীরিক জটিলতা ও ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় তাঁর অবস্থা ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল বলে সূত্রের খবর। সোমবার রাতেই সান্তাক্রুজ শ্মশানে সম্পন্ন হয় তাঁর শেষকৃত্য। একেবারে নিভৃতে, কেবল ঘনিষ্ঠ পরিবারের উপস্থিতিতে। দীপাবলির রাতে আসরানির মৃত্যু সংবাদে স্তম্ভিত হয়ে গেছে পুরো বলিপাড়া ও তাঁর অনুরাগীরা।
শোলে ছবিতে সেই বিখ্যাত জেলার চরিত্রে আসরানি। সঙ্গে অমিতাভ ও ধর্মেন্দ্র
মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে আসরানি লিখেছিলেন ‘শুভ দীপাবলি’। কিছুদিন আগেই তাঁর মৃত্যু নিয়ে ভুয়া গুজব ছড়িয়েছিল, তাই প্রথমে অনেকেই এবারও সেটিকে গুজব ভেবে উড়িয়ে দেন। কিন্তু পরে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকেই নিশ্চিত খবর আসে, কিংবদন্তি অভিনেতা সত্যিই প্রয়াত হয়েছেন। কেন তাঁর মতো এত বড় মাপের অভিনেতার শেষকৃত্যের খবরটুকুও কাকপক্ষীতে টের পেল না? কেনই বা আসরানির শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরই তাঁর পরিবার এই মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনল? জানা গেছে, আসরানির ইচ্ছাতেই তাঁকে দেওয়া হয়েছিল এই ‘নিঃশব্দ বিদায়’। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জীবনের শেষ সময়ে আসরানি নিজেই জানিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর যেন কোনো আড়ম্বর বা প্রচার না হয়। খ্যাতির আলোয় থেকেও তিনি চেয়েছিলেন এক সাধারণ মানুষের মতো শান্ত বিদায়। তাই তাঁর স্ত্রী মঞ্জু আসরানি তাঁর ইচ্ছামতো নিভৃতে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন, আর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয় অন্ত্যেষ্টির পরই। আসরানি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার অন্যতম প্রিয় মুখ। এক অনবদ্য কৌতুকাভিনেতা, যিনি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ে ৩৫০টিরও বেশি ছবিতে হাসির রং ছড়িয়েছেন। পুনের এফটিআইআই-এর প্রাক্তন ছাত্র আসরানি ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি বলিউডে পা রাখেন। শুরুতে গুরুগম্ভীর চরিত্রে অভিনয় করলেও খুব তাড়াতাড়িই তাঁর অনবদ্য হাস্যরস ও কমিক টাইমিং তাঁকে বানিয়ে তোলে দর্শকদের প্রিয় মুখ। বিশেষত সাত ও আটের দশকে, তিনি ছিলেন প্রতিটি পরিবারের হাসির কারণ। একেক সময় গোঁড়া কেরানি, কখনো বা দিশাহারা সহকারী আবার কখনো সরল, বিভ্রান্ত প্রেমিকের চরিত্রে অবিস্মরণীয়। আজও তাঁর প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি হাসি বলিউডের এক সোনালি যুগের স্মৃতি হয়ে বেঁচে আছে। তাই তো সিনেমা রসিকদের কথায়, ‘আসরানির প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি আর নিখুঁত টাইমিং যেন হয়ে উঠেছিল ভারতের হাস্যরস অভিনয়ের পাঠ্যবই।’
১৯৭৫ সালের কালজয়ী ছবি শোলে-তে তাঁর অভিনীত জেলারের চরিত্র আজও ভারতীয় পপ সংস্কৃতির অঙ্গ। ‘শোলে’-তে জেলারের ভূমিকায় তাঁর সংলাপ, ‘হাম ইংরেজোঁ কে জামানে কে জেলর হ্যায়’ আজও অমর। ‘ভুলভুলাইয়া’, ‘ধামাল’, ‘বান্টি ঔর বাবলি ২’, ‘আর... রাজকুমার’, ‘অল দ্য বেস্ট’, ‘ওয়েলকাম’, ‘সিংঘাম’-এর মতো বক্স অফিস সফল ছবিতেও অভিনয় করেছেন আসরানী।