ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকারের প্রশাসন যে নিরপেক্ষ সে ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি করতে হবে। এ ছাড়াও নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ করে প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা বিতর্কিত কোনো কর্মকর্তা- বিশেষ করে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্বাচনি দায়িত্বে ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানান। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদলের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্যও প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। বিএনপি নেতারা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ত করায় এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারায় সরকারকে অভিনন্দন জানান। পাশাপাশি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব ঘটনা অন্তর্ঘাতমূলক কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধানের আহ্বান জানান তাঁরা।
প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করে জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তাঁর তত্ত্বাবধানে হবে। জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই কর্মকর্তাদের বাছাই করে নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত স্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি মহা আয়োজন। এখানে যিনি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম, সেই ব্যক্তিকেই আমরা বেছে নেব। এটি আমার তত্ত্বাবধানে থাকবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তা করব।’ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সচিবালয় ও জেলা প্রশাসনে ফ্যাসিস্টের দোসরদের সরিয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে। বিচার বিভাগে ফ্যাসিস্টদের দোসর সরিয়ে নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি সরকারের মধ্যে কোনো দলীয় লোক থাকলে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছি আমরা।’ এর আগে সন্ধ্যা ৬টার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক আজ : দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে। আজ জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। জামায়াতের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, বুধবার বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যাবে।