ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অপতথ্য, মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে অপব্যবহারের আশঙ্কা করছে নির্বাচন কমিশন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করে কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সঠিক তথ্যপ্রবাহে একটি সমন্বিত সেল করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় বিশেষ করে ভোটের রাতে এআইর অপব্যবহার নিয়ে আশঙ্কার কথা বললেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘এজন্য আমাদের দিনরাত দিন কাজ করতে হবে।’ গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ইন্টিগ্রেশেন অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন আপকামিং ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ইলেকশন টু কাউন্টার মিসইনফরমেশন অ্যান্ড ডিজইনফরমেশন’ শীর্ষক সেমিনার উদ্বোধন করেন সিইসি। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ আজ শুরু হচ্ছে। সিইসি বলেন, ‘এআইর অপব্যবহার এখন বৈশ্বিক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এর অপব্যবহার রোধে সমন্বিত কাযক্রম হাতে নিতে চাই। আমরা অনেক দিন ধরে এটা নিয়ে কাজ করছিলাম। আমরা পরিকল্পনা করেছি এখানে মিসইনফরমেশন, ডিজইনফরমেশন অ্যাড্রেস করার জন্য একটি সেন্ট্রাল সেল তৈরি করব।’ সে ক্ষেত্রে কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ নিয়ে এগোতে চান বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া কারিগরি বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘কর্মশালা থেকে আমরা একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পাব আশা করি। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে, প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা দুর্গম এলাকা থেকে কোনো মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে, বিশেষ করে এআই ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়ালে তা দ্রুত কীভাবে রোধ করা যাবে এবং বিদ্যমান অবকাঠামোগত পরিস্থিতিতে সঠিক তথ্য কীভাবে পৌঁছানো সম্ভব হবে তা বিবেচনা করতে হবে। মিথ্য তথ্য, অপতথ্য রোধে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা সচল ও কার্যকর ব্যবস্থা যাতে থাকে এমন কর্মপন্থা চায় নির্বাচন কমিশন।
এটা ২৪ ঘণ্টার কাজ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কত লোক লাগবে, ফ্যাক্ট চেকিং মেকানিজম কীভাবে কাজ করছে, সংস্থাগুলোর কাজ কীভাবে সমন্বয় করা হবে এবং কার কী কাজ হবে এবং যেখানে মিথ্যা তথ্যের উৎপত্তি হচ্ছে সেখানে সঠিক তথ্য কীভাবে দ্রুত পৌঁছানো যাবে- তার সুস্পষ্ট সুপারিশ আসবে আশা করি।’ শহর থেকে দুর্গম এলাকায় এমন সুচারু যোগাযোগ সমন্বয় করাও কঠিন বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিইসি বলেন, ‘ফ্যাক্ট চেকিং মেকানিজম দ্রুত কাজ করতে হবে। তাই আমাদের সমন্বিতভাবে ও কার্যকরব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু একটা গাইডলাইন চাই না। সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত সুপারিশ চাই।’ অপতথ্য, মিথ্যা তথ্য, গুজব ও এআই অপব্যবহার রোধে সবার সহযোগিতা চান এ এম এম নাসির উদ্দিন।
স্বাগত বক্তব্যে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এক জরিপে দেখা গেছে, এআইর যে ভয়াবহতা তার প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে বিশ্বের ৯২ নির্বাচনি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ... আমরা একটা ভালো অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এআইর অপব্যবহার রোধের ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু আজ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রশিক্ষণ আজ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টোট) বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে (সম্ভাব্য) দুইটি করে ব্যাচে ২৫ জন তথা মোট ৫০ জনের দুই দিনব্যাপী (১২টি সেশনে) প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত থাকেন মাঠ প্রশাসনের এই কর্মকর্তারা।