হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ঘটনায় গঠিত ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। অন্য তদন্ত কমিটিগুলোও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে। তদন্ত কমিটিগুলো কার্গো ভিলেজের অগ্নি নিরাপত্তার দুর্বলতা, কারণ, সূত্রপাতস্থল ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে খতিয়ে দেখছে। আগুন লাগার সম্ভাব্য তিনটি কারণ সামনে রেখে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত এগোচ্ছে। সেগুলো হলো- বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, কেমিক্যাল স্টোরিং দুর্বলতা ও গুদামের ভেন্টিলেশন সিস্টেমের গলদ। যদিও কোনো কারণই স্পষ্ট নয়, তবে এই তিনটি কারণের যে কোনোটি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কার্গো ভিলেজে আগুনের সূত্রপাত ইমপোর্ট কুরিয়ার সেকশন থেকে হয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক। আর কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে অক্ষত মালামালের তালিকা প্রকাশ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এই তালিকা ৮ নম্বর গেটের পাশের দেয়ালে টানানো হলে সেখানে ভিড় করেন ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। খুঁজতে থাকেন নিজের পণ্য। যারা নিজের পণ্য খুঁজে পাচ্ছেন তাদেরকে খালাসের জন্য ৯ নম্বর গেটে ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) কার্গো ভিলেজ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে কর্মরত কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। যেহেতু সেখানকার কিছুই অবশিষ্ট নেই সেক্ষেত্রে এখনই আগুন লাগার কারণ বলাটা কঠিন। উদ্ধার অভিযানে কাজ করা আমাদের ফায়ার ইউনিটের সদস্যরা জানিয়েছে, তারা সেখানে গিয়ে দেখেছে আগুন উত্তর পাশ থেকে পশ্চিম পাশে দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ সময় বাতাসের বেগ বেশি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আগুনের সূত্রপাতস্থল স্কাই ক্যাপিটাল লাউঞ্জ বলে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত। ফলে আগুনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তিনটি বিষয় প্রাথমিকভাবে আমরা সামনে রেখেছি। সেগুলো হলো- বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, কেমিক্যাল স্টোরিং দুর্বলতা ও গুদামের ভেন্টিলেশন সিস্টেম কেমন ছিল সেটি নিশ্চিত হওয়া। এ ছাড়াও কার্গো ভিলেজের ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল কি না, আগুন নির্বাপণের কোনো সরঞ্জাম ছিল কি না এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, আমরা গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছি। তদন্ত শেষে আগুন লাগার কারণ ও অন্য গাফিলতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে। এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।
গতকাল বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, কার্গো ভিলেজে আগুনের সূত্রপাত ইমপোর্ট কুরিয়ার সেকশন থেকে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি আমরা নিশ্চিত নই। প্রাথমিকভাবে এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে।
নিষ্ক্রিয় শাহজালালের তিন স্তরের নিরাপত্তা : ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো এলাকার তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় এক বছর ধরে নিষ্ক্রিয়। অথচ গত বছরের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পালাক্রমে এই দায়িত্ব পালন করতেন পুলিশের আর্মড ফোর্সেস ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এপিবিএনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে নিরাপত্তা বলয়।
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুলিশের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।