দেশের ব্যাংকিং খাতের আর্থিক অবস্থা উদ্বেগজনকভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছে। চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যা তিন মাস আগের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টি ব্যাংক বাধ্যতামূলক ন্যূনতম মূলধন ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। মার্চ প্রান্তিকে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান খেলাপি এ সংকটের মূল কারণ। খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংকগুলোকে সম্ভাব্য ক্ষতির বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ রাখতে হয়। কিন্তু অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের মূলধনভিত্তি দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের লুকানো অনিয়ম ও দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসছে। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রেকর্ড পর্যায়ে বেড়েছে এবং ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি আরও গভীর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতিতে থাকা ২৪টি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক এবং ১৮টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকগুলোর দুর্বল মূলধনভিত্তি শুধু তাদের অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতি শোষণের ক্ষমতাকেই সীমিত করছে না, বরং বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন ও ব্যবসায়িক আস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাসেল-৩ কাঠামোর আওতায় এসব ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানের মূলধন পর্যায় বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় বিদেশি অংশীদাররা ঝুঁকি নিতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়ছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।