মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের আয়তন স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের মস্তিষ্ক নারীদের তুলনায় দ্রুত সঙ্কুচিত (ছোট) হয়।
নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব অসলো–এর গবেষকরা ১৭ থেকে ৯৫ বছর বয়সী প্রায় ১২ হাজার মানুষের মস্তিষ্কের স্ক্যান বিশ্লেষণ করেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৭২৬ জন ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ। গড়ে তিন বছর ব্যবধানে অন্তত দুটি এমআরআই স্ক্যান নেওয়া হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে দ্রুত আয়তন কমে যাচ্ছে, যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে সেই ক্ষয় তুলনামূলক কম।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মস্তিষ্কের আয়তন কমা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও এটি আলঝেইমার (স্মৃতিভ্রংশজনিত রোগ) রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি দেখা যায়। তবে আশ্চর্যের বিষয়, যদিও নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে আলঝেইমারে আক্রান্ত হন, তাদের মস্তিষ্কের ক্ষয় হার তুলনামূলক ধীর।
গবেষণার সহ–লেখক ও নিউরোসায়েন্টিস্ট (মস্তিষ্ক–বিজ্ঞানী) অ্যান রাভনদাল বলেন, যদি নারীদের মস্তিষ্ক দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হতো, তবে তা হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারত কেন তারা বেশি আলঝেইমারে আক্রান্ত হন। কিন্তু গবেষণায় তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে।
গবেষক দলটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন পরিমাপ—যেমন মোট আয়তন, কর্টেক্সের (মস্তিষ্কের বাইরের স্তর) পুরুত্ব, সাব–কর্টিক্যাল ভলিউম (মস্তিষ্কের গভীর অংশের আয়তন) ও সারফেস এরিয়া (পৃষ্ঠতল)—তুলনা করে দেখেছেন। গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষদের মস্তিষ্কে এসব অংশে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন বেশি স্পষ্ট, নারীদের ক্ষেত্রে তা কম।
তবে গবেষকরা বলছেন, এই পার্থক্যের সঠিক কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। জেনেটিক (বংশগত) ও পরিবেশগত নানা বিষয়, জীবনধারা এবং আয়ুষ্কালের পার্থক্য—সব মিলিয়েই হয়তো এমনটা ঘটছে।
গবেষণায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, স্মৃতি ও শেখার সঙ্গে সম্পর্কিত মস্তিষ্কের অংশ হিপোক্যাম্পাসে পুরুষ–নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই তেমন পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তবে বয়স্ক নারীদের হিপোক্যাম্পাসে সামান্য বেশি ক্ষয় দেখা গেছে, যা গবেষকদের মতে নারীদের দীর্ঘ আয়ুষ্কালের ফল হতে পারে, কোনো বিশেষ রোগঝুঁকি নয়। গবেষকরা আরও বলেন, মস্তিষ্ক সঙ্কুচিত হওয়া সব সময় খারাপও নয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রাকৃতিক অভিযোজন হিসেবেও দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনো পর্যন্ত মস্তিষ্কের বয়সজনিত পরিবর্তন নিয়ে হওয়া গবেষণাগুলোর বেশিরভাগেই লিঙ্গভেদ উপেক্ষা করা হয়েছে। ২০১৯ সালের আগে করা গবেষণার মাত্র ৫ শতাংশে এ বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছিল। ফলে অনেক গবেষণায় ফলাফল অসঙ্গত ও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
নতুন এই গবেষণা দেখিয়েছে, পুরুষ ও নারীর মস্তিষ্ক বার্ধক্যে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করে। তবে এই পার্থক্যের প্রভাব মানসিক কর্মক্ষমতা ও রোগঝুঁকিতে কেমন তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল