জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসাইন হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত মাহির রহমানকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন তার মা। জুবায়েদের টিউশনির ছাত্রী বর্ষার বয়ফ্রেন্ড মাহির। পুলিশ বলছে, প্রেমিকার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েই জুবায়েদকে খুন করেন মাহির। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে জুবায়েদের লাশ ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়। তখন কফিনবন্দি লাশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পরিবারের সদস্যরাও। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তৈরি মঞ্চেই বাদ জোহর জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর দাফনের জন্য জুবায়েদের লাশ নেওয়া হয় কুমিল্লায় তার গ্রামের বাড়িতে। এর আগে গতকাল ভোরে অভিযুক্ত মাহিরের মা নিজেই তাকে নিয়ে এসে রাজধানীর বংশাল থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পুলিশ বলছে, জুবায়েদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মাহিরকে শনাক্ত করা হয়। তবে ঘটনাটি ঘটার প্রায় এক দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো মামলা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এর আগে রবিবার বিকালে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় টিউশনি করতে গিয়ে খুন হন জুবায়েদ। জানা যায়, ওই দিন বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে আরমানিটোলার পানির পাম্প গলির রওশন ভিলা নামে একটি বাড়ির সিঁড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দুজন তরুণকে পালিয়ে যেতে দেখা গেলেও তাদের শনাক্ত করা যায়নি।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা যাদের নাম দিতে চান তাদের বিরুদ্ধেই মামলা নেওয়া হবে। এর আগে ঘটনার পর শিক্ষার্থী বর্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। রবিবার রাত ১১টায় তাকে থানায় দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বাহাদুর শাহ পার্ক, শাঁখারীবাজার মোড়, জজ কোর্ট, রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। রাত সাড়ে ১২টায় তারা বংশাল থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। রাতভর অবস্থান করে গতকাল সকালে ফিরে যায়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিহত শিক্ষার্থীর স্মরণে দুই দিনের শোক ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি আগামীকাল ২২ অক্টোবর নির্ধারিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের’ সব আয়োজন স্থগিত করেছে। জুবায়েদ খুনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শোক ও ক্ষোভের আবহ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
জানাজার আগে জবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছি, খুনিদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়। জুবায়েদের মতো একটি ছেলের শত্রু থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আমরা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
জুবায়েদের বাবা মোবারক হোসেন বলেন, ‘একটা ছুরির আঘাত আমার সব আশা ভরসা শেষ করে দিছে। আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই শান্তশিষ্ট ছিল। পান, বিড়ি, সিগারেট এসব থেকে দূরে ছিল।’
জুবায়েদ হত্যার প্রতিবাদে সুবর্ণচরে মানববন্ধন : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জবি ছাত্র জুবায়েদ হোসেন হত্যার প্রতিবাদে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকালে সুবর্ণচর উপজেলার শহীদ জয়নাল আবেদীন সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, জুবায়েদ আমাদের স্কুলের নম্র, ভদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় তাকে সম্মুখ সারিতে দেখা গেছে। এমন সাহসী শিক্ষার্থীকে দুষ্কৃতকারীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা দাবি করছি, এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
জুবায়েদ হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ : জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইন হত্যার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল বিকালে বিক্ষোভ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা সাম্য হত্যার বিচার ছাত্রদল এখনো পায়নি। এখন জবির মেধাবী ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যার শিকার হলেন। অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।