এবার ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক ও পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স কোম্পানিগুলো। এরই মধ্যে ২০টি অ্যাকাউন্ট ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় সেগুলো পেমেন্ট গেটওয়ের রিফান্ড (গ্রাহকের অর্থ ফেরত) তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টগুলো দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রিফান্ডের জন্য সরবরাহকৃত অ্যাকাউন্টগুলো যাচাইবাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে বেশ কিছুদিন ই-কমার্স কেলেঙ্কারিতে প্রতারিত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত বন্ধ থাকার পর এখন আবার রিফান্ড কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সে অনুযায়ী ইভ্যালি, দালাল প্লাসসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনাদার গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট নম্বর চাওয়া হচ্ছে যাতে তাদের অর্থ ফেরত দেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ায় ইভ্যালি ১৬৩ জন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠায়। যাচাইবাছাই শেষে দেখা যায়, এর মধ্যে ২০টি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ইভ্যালির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহকের নাম দিয়ে ইভ্যালি নিজেই এসব টাকা তুলে নিতে চাইছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, ভুয়া অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়ার প্রতারণা ঠেকাতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ও দালাল প্লাসের গ্রাহকদের দুটি তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। অনুরোধ জানানো হয়, ওই তালিকায় থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো যাচাই করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে। সরবরাহকৃত অ্যাকাউন্টগুলো অভিযোগকারী গ্রাহকদের কি না সেটিও যাচাই করতে বলা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এক চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের (ইএফটি)-এর বদলে গ্রাহকের অনুকূলে ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক’ ইস্যু প্রক্রিয়া অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রাশেদ জানান, অ্যাকাউন্ট পেয়ি হিসেবে যার নাম থাকবে, তার অ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে চেক জমা দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া পে অর্ডার ইস্যু করেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অনুকূলে অর্থ ফেরত দেওয়া যেতে পারে বলে তিনি জানান।
গ্রাহকের পাওনা কত টাকা : ই-কমার্সের নামে দেশের লাখ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও সে টাকার ঠিকঠাক হিসাব দিচ্ছে না ইভ্যালি, দালাল প্লাসসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকার একটি অংশের হিসাব নিতে সমর্থ হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়ে গেছে হিসাবের বাইরে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শুধু মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ইভ্যালির গ্রাহকরা ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছেন, যার ঠিকঠাক তথ্য মেলেনি।
কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের হিসাবে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৮৪ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে ই-কমার্স কোম্পানি কিউকম। এ ছাড়া আলোচিত কোম্পানি আলেশা মার্ট প্রায় ৪১ কোটি এবং দালাল প্লাস প্রায় ২৩ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি মাত্র ২১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। অর্থাৎ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম অর্থ ফেরত দিয়েছে ইভ্যালি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের এক কর্মকর্তা জানান, ইভ্যালির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের শুধু ব্যাংক ও পেমেন্ট গেটওয়েতে প্রায় ৫ কোটি টাকার ওপরে জমা আছে। এ ছাড়া কিউকমের ১০ কোটি, দালাল প্লাসের ৯ কোটি ৮৬ লাখ এবং আলেশা মার্টের ২ কোটি টাকার ওপরে অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক ও গেটওয়েতে আটকে আছে। এরই মধ্যে ইভ্যালি ও দালাল প্লাসের শতাধিক অ্যাকাউন্ট যাচাইবাছাই করে অর্থ ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও পেমেন্ট গেটওয়েকে চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিছু অ্যাকাউন্ট ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।