এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা দাবি আদায়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। দুই শতাধিক আন্দোলনকারী এ অনশনে অংশ নিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত চারজন অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। দাবি আদায়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা আজ মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করবেন। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। দেলাওয়ার হোসেন আজিজী গতকাল বলেন, দাবি আদায় করতে গিয়ে আমরণ অনশনের মাধ্যমে যদি কোনো প্রাণহানি ঘটে, এর দায়দায়িত্ব শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর আবরারকে নিতে হবে। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিবর্তন হবে, কিন্তু দাবি আদায় না করে শিক্ষকরা ঘরে ফিরে যাবেন না। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি পূরণে শিক্ষা উপদেষ্টাকে দুই দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। এ শিক্ষক নেতা বলেন, আমরা আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এরপরও যদি প্রজ্ঞাপন না হয়, যে পরিবেশ তৈরি হবে তা বাংলাদেশ কখনো দেখেনি। সবাইকে ঢাকায় এনে যমুনা আমরা ঘেরাও করব।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে গতকাল এ আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।
বক্তব্যে এ্যানি বলেন, আমরা যদি ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পাই, তাহলে আগামী দিনে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ শিক্ষাকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে সম্পূর্ণভাবে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়ে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এই প্রতিশ্রুতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে বিএনপির পক্ষ থেকে সংহতির কথাও জানান।
শিক্ষক-কর্মচারীদের উদ্দেশে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী আরও বলেন, আপনাদের দাবি অন্তর্বর্তী সরকার এর মধ্যে মেনে নিয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত দাবি কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছানোর জন্য, ২০ পারসেন্টের যে দাবি, সেটা এখনো হয়তো আপনারা পান নাই। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ৫ পারসেন্ট এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়। বিশেষ বিবেচনা আপনাদের করতে হবে।
২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপনের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির বিভিন্ন পর্যায়ে কালো পতাকা মিছিল, অনশন করছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত রবিবার শিক্ষা ভবন অভিমুখে শিক্ষকরা থালা-বাটি নিয়ে ‘ভুখামিছিল’ করেন। অন্যদিকে সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। তবে শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মবিরতি পালন করছে না।
এদিকে গত রবিবার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনি¤œ ২০০০ টাকা) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ প্রজ্ঞাপন না মেনে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা জানান, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা ও ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।