বিশ্ব প্ল্যাটফর্মে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুধু নিজেরাই পর্ন ভিডিও তৈরি করা নয়, বরং তরুণ-তরুণীদের এ জগতে সম্পৃক্ত করতে নানা ধরনের প্রলোভন দিয়ে আসছিল তারা। অভিযানে তাদের কাছে একাধিক গ্রুপ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, রবিবার রাতে বান্দরবানে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ও এলআইসি শাখা যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- আজিম (২৮) ও তার স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। তাদের কাছ থেকে মোবাইল, সিমকার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ পর্ন ভিডিও তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
জসীম উদ্দিন খান জানান, আজিম ও বৃষ্টি মাত্র এক বছরেই পর্ন তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে। চলতি অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পারফর্মারদের মধ্যে তাদের অবস্থান অষ্টম। গত বছরের মে মাসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তাদের প্রথম অশ্লীল কন্টেন্ট প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে এক বছরে তাদের প্রকাশিত মোট ১১২টি ভিডিও ২ কোটি ৬৭ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। একাধিক আন্তর্জাতিক পর্ন ওয়েবসাইটে তারা ভিডিও আপলোড করত। এভাবে খোলাখুলি প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেও তারা প্রচারণা চালাত। এসব প্রচারণায় ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার জন্য অন্যদেরকে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করত তারা। আগ্রহীরা নতুন ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে নতুনদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করাও ছিল তাদের কাজ। যেমন- টেলিগ্রাম চ্যানেলে নতুন ক্রিয়েটর অ্যাড করলে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে মর্মে তারা বিজ্ঞাপন দিত।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে না পারা এ যুগল দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসলেও অনলাইনে রয়েছে তাদের বিলাসবহুল জীবনধারার ছবি ও ভিডিও। বিষয়টি সামাজিক ও নৈতিকভাবে উদ্বেগজনক এবং একই সঙ্গে বেআইনি হওয়ায় সিআইডির এলআইসি এবং সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিট দ্রুততার সঙ্গে এই পর্ন-তারকা যুগলকে গ্রেপ্তার করে। গত ১৭ অক্টোবর ‘দ্য ডিসেন্ট’ নামে নিউজ পোর্টাল একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশি যুগল যেভাবে আন্তর্জাতিক পর্ন তারকা’।
প্রতিবেদনটিতে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছিল, কীভাবে এক বাংলাদেশি দম্পতি এডাল্ট ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন এবং তাদের কর্মকান্ড কীভাবে তরুণ প্রজন্মকে এই খাতে আকৃষ্ট করছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর দেশজুড়ে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।