হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এখন ধ্বংসস্তূপ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্টিলের স্ট্রাকচার আর পোড়া ছাই। ফুলে উঠেছে মেঝে। খসে পড়ছে দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা। বড় অংশজুড়ে দেয়াল ও থাই গ্লাস ভাঙা। সতকর্তার সঙ্গে ছাইয়ে পানি ঢালছেন ফায়ার কর্মীরা। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে বাইরের পোড়া ক্ষত দেখা গেছে। ভিতরের বর্ণনা দিয়েছেন উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত সদস্যরা। তিন দিন আগেও লোকারণ্য থাকত জায়গাটি। পণ্য খালাসে ব্যস্ত সময় পার করতেন কুরিয়ার কর্মী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টম কর্মকর্তারা। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত কার্গো ভিলেজ চালুর দাবি জানিয়েছেন কর্মরত বিভিন্ন কোম্পানির কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গতকালও অগ্নিকান্ডে র স্থলে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কাজ করতে দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিটকে। পুবপাশে কুরিয়ারের সামনে কার্গো কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে নৌবাহিনী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মী ও আনসারদের পাহারায় দেখা গেছে। পাশের ফুটপাতে মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ। পণ্য খালাস শুরু না হওয়ায় কুরিয়ার কর্মী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা ঘটনাস্থলের পাশে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অগ্নিকান্ডে র পর সাময়িক বন্ধ থাকা ৮ নম্বর গেটের কার্যক্রম স্বাভাবিক দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কার্গো কমপ্লেক্স ভবনের উত্তর ও পশ্চিম পাশ পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও পুবপাশে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়েছে। পুবপাশের কুরিয়ার গেট, বাংলাদেশ কার্গো বিশ্রামাগার, প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক, সিটি ব্যাংকের অফিস, এয়ার ফ্রেড ইউনিটের জায়গাগুলোয় আগুন তা ব চালাতে পারেনি। তবে উত্তর ও পশ্চিম অংশের ভিতরে শুধু স্টিলের স্ট্রাকচার ও ছাই ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত ফায়ার ফাইটার শিহাব সরকার বলেন, কার্গো ভিলেজ এলাকায় সাতটি ইউনিট মোতায়েন রয়েছে।
ফাস্টিক বিডি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী মো. মাসুম বলেন, ‘রবিবার রাতে মালিকপক্ষ জানিয়েছে ৯ নম্বর গেট দিয়ে পণ্য খালাস করতে দেবে। মালিকদের কথামতো সকাল ৯টায় এখানে আসি। কিন্তু আমাদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বলা হচ্ছে, বিমানের লোক মাল (পণ্য) বুঝিয়ে দেবে। এতে পণ্য পেতে অনেক সময় ও জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ হাজার হাজার পণ্যের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট মাল খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।’
বাদমা গ্রুপের কর্মী সানাউল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির যে ক্ষতি হয়েছে, চাকরি নিয়ে সংশয়ে আছি।’ তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেডের কর্মী জাহিদুর বলেন, ‘কুরিয়ারে আসা পণ্য লোড-আনলোডের কাজ করতাম। কার্গো ভিলেজ দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করলে কাজে ফিরতে পারতাম।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিঅ্যান্ডএফ সদস্য বলেন, ‘এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। তদন্ত কমিটি যেন গাফিলতিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করে।’
উল্লেখ্য, শনিবার বেলা ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।