একদা খাল-বিলজুড়ে পানিফল প্রাকৃতিকভাবেই হতো। এখন এই ফল শেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিপণন বাড়ছে। অল্প শ্রম ও কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় শেরপুরে দিন দিন বাড়ছে পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ।
ফলটির নাম পানিফল হলেও তিনকোনা শিঙাড়া আকৃতি হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এই ফলকে শিঙাড়া বলেও ডাকা হয়। স্রোত কম, মাঝামাঝি গভীর, জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতে পুষ্টিগুণে ভরা, ডায়াবেটিক রোগীদের উপকারী এ ফলের চাষে ভালো লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা। ওই সব স্থান ছাড়াও এখন মাছের ঘেরের মতো সুবিধাজনক স্থানেও চাষ হচ্ছে ফলটি। এতে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক প্রান্তিক কৃষকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা।
চাষীরা জানান, পানিফল গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত। পানিফল গাছ কচুরিপানার মতো পানির ওপরে ভেসে থাকে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল রঙের থাকে, মধ্য পর্যায়ে সবুজ ও পরিপক্ব হলে কালো রং ধারণ করে। ফলটির কালো খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিণ্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা ও লাল শাস। এই ফলটি খেতে আর কোনোরকম প্রক্রিয়া করতে হয় না। কাঁচা ফলের এ নরম শাসটি খেতে বেশ সুস্বাদু।
শেরপুর জেলার সদর উপজেলার চরশেরপুর, বামনের চর বিল, পাকুড়িয়া রৌহা ও গাওয়াৎ বিল, পৌর এলাকার আওড়াবাওড়া বিল, ঈশলি বিল, শ্রীবরদী উপজেলার বৈশা বিল, খড়িয়া গাজির চর, কুড়িকাহনীয়া, গরজরিপা, নকলা উপজেলার পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোনা, উরফা, গণপদ্দী ও বানেশ্বরদী, নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল, রাজনগর, বরুডুবি, ঝিনাইগাতি মালিঝিকান্দা, আসামপাড়া, ধলিবিল, কালি নগরসহ বিস্তার এলাকায় এ বল বাণিজ্যিক চাষ বা প্রাকৃতিকভাবে হয়ে থাকে।
কৃষক সূত্র জানিয়েছে, ছয় মাসে বিঘাপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ করে ৭০-৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করা সম্ভব। পানিফলের প্রথম ফলন আসে তিন মাস বয়সে এবং এরপর আরও তিন মাস ধরে এই ফলন পাওয়া যায়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এই পানিফলের চারা লাগানো হয়। মাঘ-ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগের আরও সহযোগিতা পেলে কৃষকরা আরও আকৃষ্ট হবে।
চরশেরপুরের কৃষক জলিল মিয়া, সাবেদ আলী, পাকুড়িয়ার ফজলু, আমেজ আলীসহ কয়েকজন কৃষক এসব তথ্য দিয়েছেন।
পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে ও সহজ শর্তে কৃষিঋণ পেলে দেশের জলাবদ্ধ অনাবাদি জমিতে পানিফল চাষের মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেন। এই ফল আবাদের সঠিক পরিমাণের তথ্য না থাকলেও উপজেলাতে এ বছর প্রায় শত একর জমিতে পানিফল চাষ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, লাভের কারণে পানিফলের চাষ বেড়েছে। তবে জেলায় কত একর জায়গায় এই ফলের আবাদ হয়, কৃষি বিভাগের কাছে এই তথ্য নেই। স্বাদে, গন্ধে ও পুষ্টিগুণে ভরা জলজ উদ্ভিদের এই ফলটি মানুষের কাছে প্রিয়। কৃষি বিভাগের কাছে এখন পর্যন্ত এটি মাইনর হলেও আগামী থেকে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ রাখবে শেরপুর কৃষি বিভাগ।
বিডি প্রতিদিন/কেএইচটি