নাট্যচর্চায় ৩৪ এ পদার্পণ করেছে নাটকের দল থিয়েটার আর্ট ইউনিট। পথচলার এই ৩৪ বছরে রাজধানীর নাট্যানুরাগিদেরকে দলটি উপহার দিয়েছে রুচিসম্মত ভালোলাগার অগণিত নাটক। আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনও দলটি সাজিয়েছে নিজস্ব প্রযোজনায় নাটক দিয়ে। আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগে দলটির নিজস্ব প্রযোজনার দর্শকনন্দিত নাটক "বলয়" এর দুইদিনব্যাপী মঞ্চায়নের আয়োজন করেছে দলটি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয় দুইদিনের মঞ্চায়নের প্রথম দিনের প্রদর্শনী।
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ একটা বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ। ইচ্ছে করলেও মানুষ সেই বলয় থেকে বেরোতে পারে না। এমন গল্প নিয়েই বিন্যাস্ত হয়েছে নাটকটির কাহিনী।
নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মোকাদ্দেম মোরশেদ। সৃষ্টির শুরু থেকেই প্রাণের আবির্ভাব, প্রাইমেট যুগ, বিবর্তনের যাত্রায় হোমো স্যাপিয়েন্স। সভ্যতার উত্থান সভ্যতার বিকাশ। গোষ্ঠীবদ্ধ মানবজাতি, দ্বন্দ্ব-তর্ক, দল, সম্প্রদায়, বিকশিত জীবনাচরণ আজ অবধি কিংবা পরবর্তীতেও এমনকি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডও ছকে বাঁধা নিয়ম মাফিক বিরাজমান। একই বৃত্তে বারবার পুনর্বার চাওয়া-পাওয়া কিংবা ক্ষমতার পুনরাবৃত্তি, মানব জীবন আস্থা অনাস্থার বেড়াজালে আবদ্ধ, যেন একই বৃত্তে ঘুরপাক। একটি চক্র, একটি বলয় ঘিরে রেখেছে আমাদের প্রত্যেককে। সামাজিক বলয়, রাজনীতির বলয়, ধর্মীয় বলয়, যুক্তি-অযুক্তির বলয়, ক্ষমতার বলয়, শোষণের বলয়, শাসকের বলয়। বলয়বৃত্তে ছটফট করা প্রাণ ছুটে যেতে চায় মুক্ত হতে চায়, হয়তো ছুটে যায়ও কিন্তু পড়ে যায় আরেক বলয়ে।
নাটকটির অন্যতম তিনটি চরিত্র- রাজনীতিক, বিজ্ঞান চিন্তক, ও ধর্মতাত্ত্বিক। প্রত্যেকেই নিজের মেধায় পেশায় পরিপক্ক কিন্তু কোথায় জানি একটা আকুলতা, মুক্তির বাসনা। তারা তিনজনই এসেছে মন বিশ্লেষকের কাছে কাউন্সেলিংয়ের জন্য। তাদের উপলব্ধি প্রত্যেকেই তারা আপন বলয়ে আবদ্ধ। হাঁপিয়ে উঠেছে তারা, আর পেরে উঠছে না। তারা পরিত্রাণ চায়। বলয় মুক্ত জীবন চায়। আসলেই কি তা সম্ভব? কাউন্সিলিং এর ফাঁকে বের হয়ে আসে তাদের না বলা কথা, উপলব্ধির কথা। বিজ্ঞান ধর্ম রাজনীতির কথা, যুক্তির পিঠে যুক্তি, যুক্তি খণ্ডন, আড়া অনাস্থা অনুভবের কথা, তারা ফিরে যায় তাদের আপন সত্ত্বায়। নিজের সাথেই নিজের কথোপকথন। সম্ভব কি বলয় থেকে মুক্তি, নাকি নতুন বলয়ের অভিষেকে নিজেকে করবে সমর্পণ!
এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী।
নাটকটি নিয়ে নাট্যকার ও নির্দেশক মোকাদ্দেম মোরশেদ বলেন, পান্ডুলিপিটি যখন লিখি তখন ছিলাম একটি বলয় -এ।
আজ আপনারা যখন নাটকটি দেখছেন তখন আমরা আরেকটি বলয়ে আবদ্ধ। রাজনৈতিক বলয় সহ সামগ্রিক পারিপার্শ্বিক বলয়ের একটা স্থানান্তর ঘটেছে। এক বলয় থেকে অন্য বলয়ে আমরা স্থানান্তরিত হয়েছি। বলয় কিন্তু রয়েই গেছে। বলয় থেকে বলয়ে গমন অথবা আটকে পড়া বলয়ে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের স্পন্দন, অনুকূলে বা প্রতিকূলে মুক্তিহীন কারাবন্দী বহমান এই জীবনে এই উপলব্ধিই 'বলয়' নাটকের চিন্তা সূত্র।
বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- সেলিম মাহবুব, স্বাধীন শাহ, কামরুজ্জামান মিল্লাত, মাহমুদা হোসেন ভাবনা, নওমী, মোকাদ্দেম মোরশেদ,
হাসনাত প্রদীপ, মেহেরুবা, ফারহানা, নাহিদ সুলতানা লেমন, রানা শিকদার, রেজাউল আমিন সুজন প্রমুখ।
এর আগে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কথা বলেন বরেণ্য নাট্যাভিনেতা আবুল হায়াত।
শুক্রবার একই সময়ে একই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে নাটকটির দ্বিতীয় ও সমাপনী দিনের প্রদর্শনী।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন