বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা-মাড়াই এর মৌসুম শুরু হয়েছে। মাঠজুড়ে সোনালি ধানের দোল খাওয়ায় খুশির জোয়ার বইছে কৃষকদের মনে। তাদের মাঝে নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ বইছে। তবে আমন ধান কাটার মৌসুম শুরু না হলেও আগাম জাতের ধান কেটে ঘুরে তুলছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলে পুরো জেলাজুড়ে এখন চলছে সোনালি ধানের উৎসব। কৃষকের বাড়িতে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাদের ঘরে গোলা ভরতে শুরু করেছে ধানে। আগাম জাতের ধানের ভালো ফলন আর বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। এদিকে আগাম জাতের ধান কেটে ওই জমিতে আলু, সরিষা, গমসহ শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করবেন তারা।
জানা যায়, বগুড়া জেলার সদর, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শিবগঞ্জ, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি ও কাহালু উপজেলায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজারদর ভালো থাকায় লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। অল্প সময়ে ঘরে তোলা যায় বলে এ ধান চাষ এখন কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কাটার পর একই জমিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে অতিরিক্ত আয় করার আশা করছেন তারা। নন্দীগ্রাম উপজেলার নামুইট, বদলাষনসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন মাঠজুড়ে পাকা ধানের সোনালি রঙের সমারোহ। যতদূর চোখ যায় শুধু পাকা ধানের ঝলমলে শীষ। কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষেরা ধান কাটা-মাড়াই ও ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরে ১ লাখ ৪৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চলতি আমন মৌসুমে জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৬১ হাজার ২৭৮ মেট্রিকটন। এরমধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এর চেয়েও বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। উপজেলায় কৃষকরা আগাম জাতের ধান আবাদ করেছেন। এসব ধানের ফলনও আশানুরূপ। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না থাকায় এ বছর আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলার বদলাষন গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন জানান, ৪ বিঘা জমিতে আগাম ব্রি-৭৫ জাতের ধান চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। ধানা কাটা-মাড়াই শুরু করেছি। আগাম জাতের ধান কাটা শেষ করে ওই জমিতে আলু, সরিষা ও পেঁয়াজ চাষ করা হবে। এক মৌসুমে একাধিক ফসল ফলিয়ে বাড়তি লাভের আশা করছেন তিনি।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৬১ হাজার ২৭৮ মেট্রিকটন। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা আগাম জাতের ধান বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
এদিকে ধান কাটা ও নবান্ন উৎসবকে ঘিরে কৃষক পরিবার ও গ্রামীণ নারীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। নতুন ধানের চাল দিয়ে ক্ষীর-পায়েস, পিঠা-পুলি বানিয়ে অতিথি আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসব পালন করবেন তারা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন