মানুষের কোষের ভেতরের ক্ষুদ্র দরজা বা নিউক্লিয়ার পোর কমপ্লেক্স (সংক্ষেপে NPC) কীভাবে কাজ করে, তার রহস্য উন্মোচন করেছেন একদল বিজ্ঞানী। এই আবিষ্কার ক্যান্সার, আলঝেইমার এবং এএলএসসহ (স্নায়ুবিক দুর্বলতার এক ধরনের জটিল রোগ) বিভিন্ন রোগ বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দিক খুলে দিতে পারে।
জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (সান ফ্রান্সিসকো), রকফেলার ইউনিভার্সিটি এবং অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা এ যৌথ গবেষণায় অংশ নেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোষের কেন্দ্রীয় অংশের (নিউক্লিয়াস) ভেতর ও বাইরে অণু প্রবেশ ও নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করে এসব ক্ষুদ্র দরজা বা NPC। এগুলো মানুষের চুলের প্রস্থের প্রায় ৫০০ ভাগের এক ভাগের মতো ছোট।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই দরজাগুলো এক ধরনের নমনীয় প্রোটিন জালের মাধ্যমে কাজ করে। গবেষক বারাক রাভে বলেছেন, NPC-কে ছোট কিন্তু অত্যন্ত দক্ষ নিরাপত্তা চেকপোস্ট হিসেবে ভাবা যায়। এগুলো প্রতি মিনিটে লাখ লাখ অণুকে ভেতরে-বাইরে যেতে দেয়, কিন্তু ভুল অণুগুলোকে ঠেকিয়ে রাখে।
এর আগে বিজ্ঞানীরা NPC কীভাবে এত দ্রুত অথচ বাছাই করে কাজ করে, তা পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। কারণ এগুলো এতই ক্ষুদ্র ও দ্রুতগতির যে সরাসরি দেখা সম্ভব হয়নি। নতুন গবেষণায় পরীক্ষার ফলাফল ও কম্পিউটার সিমুলেশনের (কম্পিউটারে তৈরি মডেল) মাধ্যমে দেখা গেছে, NPC-এর ভেতরে একটি ঘন প্রোটিন জঙ্গল আছে, যেখানে FG রিপিটস নামের প্রোটিন চেইনগুলো ক্রমাগত নড়াচড়া করে।
এই নড়াচড়া এমন এক পরিবেশ তৈরি করে, যা অনুমতিহীন অণুদের বাধা দেয়, কিন্তু সঠিক ‘পাসপোর্টধারী’ অণুদের যেতে দেয়। বড় অণু কেবল তখনই পার হয়, যখন তারা ‘নিউক্লিয়ার ট্রান্সপোর্ট রিসেপ্টর’ নামের একধরনের প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
গবেষক মাইকেল রাউট বলেন, এটি যেন এক ধরনের নাচের মঞ্চের মতো, যেখানে শুধুমাত্র সঠিক সঙ্গী থাকা অণুরাই পার হয়, অন্যরা আটকে যায়।
এই গবেষণার ফলাফল প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই নতুন ধারণা ও মডেল ব্যবহার করে ভবিষ্যতে এমন ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হবে, যা কোষের ভেতর অণু চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এমনকি কৃত্রিমভাবে NPC-এর মতো গঠন তৈরি করে সরাসরি কোষের কেন্দ্রে ওষুধ পৌঁছানোও একদিন বাস্তব হতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল