গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব গাজায় ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ থাকা ৭ শতাধিক ভিডিও মুছে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট–এর প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) প্রমাণ হিসেবে পাঠানো ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভিডিওগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার অজুহাতে সরিয়ে ফেলা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন তিনটি ফিলিস্তিনি সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল— আল–হক্ক, আল–মিজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ও প্যালেস্টাইনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস। এই সংগঠনগুলো ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করতে আইসিসির সঙ্গে কাজ করছিল।
অক্টোবরের শুরুতেই ভিডিওগুলো ডিলিট করা হয়। এতে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলার বহু বছরের নথি হারিয়ে গেছে। মুছে দেওয়া ভিডিওগুলোর মধ্যে ছিল সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার তদন্তমূলক ফুটেজ ও প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য বিচ’, যেখানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত শিশুদের দৃশ্য ছিল।
ইউটিউব স্বীকার করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে গিয়ে তারা “বাণিজ্য ও রপ্তানি আইন” অনুসারে ভিডিওগুলো সরিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ গোপন রাখার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করছে।
সারা লিয়া হুইটসন, পরিচালক, ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ (DAWN), বলেন, “এই সংস্থাগুলোর তথ্য শেয়ার করা কোনোভাবেই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন নয়।”
অন্যদিকে সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস ইউটিউবের সিদ্ধান্তকে “যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা” হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। আল–হক্ক একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর “ভয়ংকর আঘাত” বলে অভিহিত করেছে।
প্যালেস্টাইনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ইউটিউব অপরাধীদের জবাবদিহি থেকে বাঁচাচ্ছে। আল–মিজান জানিয়েছে, তাদের চ্যানেল কোনো সতর্কতা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও এমন সেন্সরশিপ আসতে পারে।
দ্য ইন্টারসেপ্ট লিখেছে, ইউটিউবের আচরণ “পক্ষপাতদুষ্ট”— যেখানে প্রো–ইসরায়েল ভিডিও অক্ষত থাকছে, কিন্তু ফিলিস্তিনি বর্ণনা ও নথি নিয়মিতভাবে সরানো হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউটিউব ট্রাম্প প্রশাসন ও ইসরায়েলের চাপে নতি স্বীকার করেছে।
এই দমন অভিযান শুরু হয়েছে এমন এক সময়, যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত–এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র আদালত–সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এদিকে ২৮ অক্টোবর উইকিপিডিয়া–তে ‘গাজা গণহত্যা’ শিরোনামের পেজটি সম্পাদনা থেকে লক করা হয়। পরে প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস হস্তক্ষেপ করে একে “পক্ষপাতদুষ্ট” বলে মন্তব্য করেন। তাঁর এই বক্তব্যের পর সম্পাদকরা তীব্র সমালোচনা করেন এবং অভিযোগ করেন, ওয়েলস রাজনৈতিক চাপে নতি স্বীকার করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক