পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। ১৩ টেস্টের ১২টিতেই হেরেছে। ড্র সাকল্যে একটি, খুলনায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের আগে পাকিস্তানে খেলা পাঁচ টেস্টের সবগুলোতেই হেরেছে। এবারই না হারার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আজ পঞ্চম দিন পাকিস্তান কতটা সময় ব্যাটিং করবে, কত স্কোর করবে, তার ওপর নির্ভর করবে টেস্টের জয়, পরাজয়। পাকিস্তান ৯৪ রানে পিছিয়ে থেকে হাতে ৯ উইটে নিয়ে ব্যাটিং করবে। বাংলাদেশের বোলাররা যদি অল্প রানে বেঁধে ফেলতে পারে শান মাসুদদের এবং টার্গেট কম রাখে, তাহলে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টের পর এই প্রথম পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো টেস্টে চালকের আসনে বসেছে বাংলাদেশ। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের সবার চোখ এখন রাওয়ালপিন্ডির দিকে। সবাই উৎসুক নয়নে অপেক্ষায়- কী হবে হাজার হাজার মাইল দূরের রাওয়ালপিন্ডিতে? চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৫৬৫ রানে। আক্ষেপে পুড়েছেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ৮৯ টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও আউট হয়েছেন ১৯১ রানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। এর আগে সেঞ্চুরি করেছেন হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লা। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান করেছিল ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান। ১১৭ রানে পিছিয়ে গতকাল স্বাগতিকরা দিন শেষ করেছে ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে।
বেশকিছু রেকর্ড হয়েছে গতকাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলগত স্কোর গড়েছে নাজমুল বাহিনী। ১৬৭.৩ ওভার ব্যাটিং করে ৩.৩৭ স্ট্রাইক রেটে ৫৬৫ রান করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ দলগত স্কোর ৬ উইকেটে ৫৫৫ রান। ২০১৫ সালে খুলনায় দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোরটি করেছিল টাইগাররা। সেবার ওপেনিং জুটিতে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েশ রেকর্ড ৩১২ রান করেছিলেন। তামিম ২০৬ ও ইমরুল ১৫০ রান করেছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে মুশফিক ১৯১, মেহেদি মিরাজ ৭৭, সাদমান ইসলাম ৯৩, মুমিনুল হক ৫০ ও লিটন দাস ৫৬ রান করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই প্রথম কোনো ইনিংসে পাঁচটির ওপর হাফসেঞ্চুরি রয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে স্কোরটি করেছিল বাংলাদেশ। ওই ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। খেলেছিলেন ২০০ রানের ইনিংস। মোহাম্মদ আশরাফুল করেছিলেন ১৯০ রান। মুশফিক ক্যারিয়ারে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি করেন। সর্বোচ্চ অপরাজিত ২১৯ রান করেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে ২০১৮ সালে। দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসটিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ২০৩ মিরপুরে। সাকিব ২১৭ রান করেন ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং তামিম ২০৬ রান করেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে খুলনায়।
সপ্তম উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়েছেন মুশফিক ও মেহেদি মিরাজ। দুজনে জুুটিতে যোগ করেন সর্বোচ্চ ১৯৬ রান। মেহেদি মিরাজ ৭৭ রান করেন ১৭৯ বলে ৬ চারে। আগের রেকর্ড ছিল ১৪৫ রানের। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান এই রেকর্ডটি গড়েছিলেন। সপ্তম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ৩৪৭। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিজটাউনে রেকর্ডটি করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেনিস অ্যাটকিনসন ও ক্লেয়ারমন্তে দেপেইয়াজা। মুশফিক খেলতে নামেন আগের দিনের অপরাজিত ৫৫ রান নিয়ে। দলীয় ৫২৮ রানে সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ আলির হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেন ৩৪১ বলে ২২ চার ও এক ছক্কায়। স্ট্রাইক রেট ৫৬.০১। সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি মুমিনুল হকের, ১২টি।
গতকাল ৫ উইকেটে ৩৬৫ রান নিয়ে খেলতে নামে টাইগাররা। একটি বাউন্ডারি মেরেই সাজঘরে ফেরেন লিটন। ৩৩২ রানে লিটনের বিদায়ের পর মেহেদি মিরাজ আসেন ব্যাটিংয়ে। এর পর মিরাজকে নিয়ে জুটি বাঁধেন মুশফিক। যোগ করেন রেকর্ড ১৯৬ রান। দুজনে ব্যাটিং করেন ৫৬ ওভার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : প্রথম ইনিংস: ৪৪৮/৬ (ডি.) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৩/১, ১০ ওভার (শরীফুল ইসলাম ৫-২-১৩-১; হাসান মাহমুদ ৫-২-৯-০)।
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, (আগের দিন ৩১৬/৫) ৫৬৫/১০, ১৬৭.৩ ওভার (সাদমান ইসলাম ৯৩, জাকির হাসান ১২, নাজমুল হোসেন শান্ত ১৬, মুমিনুল হক ৫০, মুশফিকুর রহিম ১৯১, সাকিব আল হাসান ১৫, লিটন দাস ৫৬, মেহেদি হাসান মিরাজ ৭৭। শাহীন আফ্রিদি ৩০-৩-৮৮-২, নাসিম শাহ ২৭.৩-৬-৯৩-৩, খুররম শাহজাদ ২৯-৩-৯০-২, মোহাম্মদ আলি ৩১-৪-৮৮-২, আগা সালমান ৪১-৩-১৩৬-০, সাইম আইয়ুব ৭-১-৩৪-১, সৌদ শাকিল ২-০-৯-০)।