রাজাদের শহর গোয়ালিয়র অধ্যায় শেষ। নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস, তাসকিন আহমেদদের পরের মিশন মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী দিল্লিতে। ঐতিহাসিক শহরটির দুর্গঘেরা অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামীকাল ৩ ম্যাচ টি-২০ সিরিজের দ্বিতীয়টি খেলবে বাংলাদেশ। নাজমুল বাহিনী কি পারবে ঐতিহাসিক শহরটিতে ঘুরে দাঁড়াতে? অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম আবার টাইগারদের পয়মন্ত ভেন্যু। এ মাঠে দুটি জয় রয়েছে বাংলাদেশের। গত নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারতকে প্রথমবারের মতো টি-২০ ম্যাচে হারিয়েছিল টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে দেশটির মাটিতে এখন পর্যন্ত এটাই একমাত্র জয়। সে সব সুখস্মৃতি নিয়ে নাজমুলরা কি গোয়ালিয়রের ব্যাটিং ব্যর্থতা ভুলে নতুন প্রেরণায় খেলবেন? টাইগার অধিনায়ক নাজমুল অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। কীভাবে আমরা কামব্যাক করতে পারি, এখন সেটা দেখতে হবে। আমার মনে হয়, আমাদের সবারই দায়িত্ব নিতে হবে।’ যদিও গোয়ালিয়রের শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্দিয়া স্টেডিয়ামের অভিষেক টি-২০ ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিং- উভয় বিভাগেই বিপর্যস্ত হয়েছেন নাজমুলরা।
হারুক কিংবা জিতুক- সব সময়ই বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রশংসা করেন বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। ঠিক বিপরীত চরিত্র পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার বাসিত আলি। এ দেশের ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। টাইগারদের জয়কে কখনো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। জিতলে বলেন, ভাগ্যগুণে জিতেছে। হারলে সমালোচনার তীর্যক বাণে জর্জরিত করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পরও প্রশংসা করেননি বাসিত। গোয়ালিয়রে ভারতের কাছে প্রথম টি-২০ ম্যাচে ৭ উইকেটে হারের পর নাজমুলদের সমালোচনার তরবারিতে এফোর-ওফোর করেছেন পাকিস্তানের সাবেক এ ক্রিকেটার। অবশ্য সমালোচনা করার মতো ক্রিকেট খেলেছে নাজমুল বাহিনী। ভারতের ‘বি’ ক্যাটাগরির দলের বিপক্ষে পুরো ২০ ওভার খেলতে পারেনি টাইগাররা। ৪৯ বল আগে ম্যাচ হেরেছে। নাজমুলদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার বলেন, ‘ভারত তাদের আধিপত্য দিয়ে ক্রিকেটটাই বদলে দিয়েছে। ম্যাচে ভারতীয়দের জন্য নাজমুলরা ছিলেন শুধু একটা অ্যাপিটাইজার।’
ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতীয় স্কোয়াডের মাত্র তিনজন খেলেছেন। অধিকাংশ ক্রিকেটারই আইপিএলের পারফর্মার। এমন একটি দলের বিপক্ষে মাত্র ১২৭ রান করে টাইগাররা। ম্যাচে কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারার ব্যাখ্যা দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল। জানিয়েছেন মানসিকতায় বদল আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঘরের মাঠে অনুশীলন করি, তখন উইকেটের পরিবর্তন আনতে হবে। ঘরের মাঠে ১৪০-১৫০ রানের উইকেট হয়। ব্যাটসম্যানরা জানে ওই রানটা কীভাবে করতে হয়। কিন্তু আমরা জানি না কীভাবে ১৮০ রান করা যায়। উইকেটের পরিবর্তন আনতে হবে। ওই ধরনের উইকেট অনুশীলন করলে হয়তো আমাদের আরেকটু উন্নতি হবে। শুধু উইকেটের দোষ দেব না, মানসিক উন্নতিটাও জরুরি।’ টাইগার অধিনায়ক ভুল বলেননি। টি-২০ ক্রিকেটে দলগুলো যেখানে নিয়মিত আড়াইশ রান করছে, সেখানে নাজমুল বাহিনীর স্কোর দেড় শ টপকাচ্ছে না। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টি-২০ ম্যাচ খেলেছে ১৭৭টি। জিতেছে ৬৮টি।
২০০-এর ওপরে স্কোর ৬টি এবং দেড়শোর্ধ স্কোর ৬৩টি। সেঞ্চুরি মাত্র একটি। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়ার পর থেকে একমাত্র ওয়ানডে ফরম্যাটেই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করছে বাংলাদেশ। টেস্ট ও টি-২০ ক্রিকেটে ধারাবাহিক নয়। ভালো করতে ক্রিকেটারদের দক্ষতার উন্নতি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য আছে। সামর্থ্য অবশ্যই আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে দক্ষতা উন্নতির অনেক জায়গা আছে। এ উন্নতি কীভাবে হবে? আমি ১০ বছর ধরে দেখছি, আমরা এ রকমই ব্যাটিং করে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে হয়তো ভালো ব্যাটিং করি।’
গোয়ালিয়র ম্যাচে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে নাজমুল বাহিনীর রান ছিল ২ উইকেটে ৩৯। পাওয়ার প্লে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না দলের ওপরের সারির ব্যাটাররা। আক্রমণাত্মক মেজাজে শুরু করলেও সেই ধারাবাহিকতা থাকছে না ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। ব্যাটারদের দায়িত্বশীল হতে বললেন। নাজমুল বলেন, ‘শুরুতেই বেশি উইকেট পড়ে বড় স্কোর করা কঠিন হয়ে যায়। ইতিবাচক অ্যাপ্রোচে ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা ভালো হলে বাকিদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। যারা ভালো খেলছে, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’