ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জনগণ অসহায়
হাসিনা আকতার নিগার

ছোট ঘটনা অনেক সময় বড় সত্যকে তুলে ধরে। জমি-জমা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বারবার হয়রানি করছে এক গ্রামের কিছু সাধারণ মানুষকে। এমনকি সাধারণ জনগণ সরকার থেকে জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার আগে আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে করা মামলাতে রায় তার বিপক্ষে গেছে সেটাও সে মানতে রাজী নয়। আর ভূমি অফিস কতৃর্ক জমি বন্দোবস্তের দলিল খতিয়ানসহ সকল কাগজাদি পয়সার বিনিময়ে হয়- এমন ভাষ্য দিয়ে তিনি বলতে চায় সরকার বা রাষ্ট্রকে যেহেতু কিছু করা যাবে না, সেহেতু সরকার যাদের জমি বরাদ্দ দিয়েছে তিনি সেই জমি তাদের ভোগ করতে দিবেন না।  

সাধারণ কিছু মানুষের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চালাতে গিয়ে এ ব্যক্তি সমগ্র প্রশাসনকে জনগণের কাছে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে উপস্থাপন করলেন। যা নিন্দনীয়। বাংলাদেশে এখনো গ্রামের সাধারণ মানুষদের ঘুষ দিয়ে বড় বড় কাজ করার মত সাহস কিংবা ক্ষমতা নেই। এমনকি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ভূমি ব্যবস্থাপনাতে অনেক কিছু গ্রাম্য বিচার সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেন তারা। 

সরকারি কর্তাব্যক্তির অভিযোগের বিচার যদি ন্যায়ের পক্ষে থাকে তাহলে গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো বঞ্চিত হবে না এটাই সত্য। আবার তারা আতঙ্কিত, যদি এ ব্যক্তি তার প্রভাব খাটিয়ে তাদের মিথ্যা মামলাতে জড়িয়ে দেয়। যার কারণে তারা থানা পুলিশের শরণাপন্ন হতেও ভয় পান। 

সব কিছুর উপরে সামগ্রিকভাবে যে বিষয়টি চিন্তনীয় তা হলো, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এ কর্তাব্যক্তি যেভাবে প্রশাসনকে মানুষের কাছে ঘুষখোর দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে উপস্থাপন করলেন তার কী প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

এমনিতেই বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ নামের যে দুর্নীতি ছড়িয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কিত সচেতন মানুষ ও সরকার। তবে গ্রামের মানুষরা সব কিছুতে দুর্নীতি করার মানসিকতা পোষণ করে না বলে অন্যায়ভাবে শোষিত হয়। তারা নিজেদের সামান্য সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে সততার সাথে থাকার চেষ্টা করেন।

আবার অন্যভাবে দেখা যায়, প্রশাসনে সবাই ঘুষখোর নয়। যদি তাই হত দেশটা এগিয়ে যেত পারত না। হয়ত বা মনে হতে পারে একজন ব্যক্তির কথাতে কি আসে যায়। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিকভাবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে গ্রামে প্রবাসীদের পরিবারের সংখ্যা বেশি। তবুও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে একজন সরকারি কর্মকর্তার গ্রহণযোগ্যতা সামাজিকভাবে অনেক বেশি। ধরে নেয়া হয় জ্ঞান ও কর্মদক্ষতায় সে অন্যদের চেয়ে আলাদা। সম্মানীয় এ স্থান থেকে তার ভালো কথা মানুষকে আশার আলো দেখায়। আবার বিরূপ মন্তব্য লোক মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে নানাদিকে। এতে করে প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা, বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়। মানুষ যথাযথভাবে কাজ করার পরেও শঙ্কিত থাকবে তার কাগজপত্রাদি নিয়ে। নিজের অমূলক উদ্দেশ্য হাসিল করতে গিয়ে বিচারকে বিভ্রান্ত করতে এমন কথার প্রভাব কতটা ক্ষতিকর তা সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে বোধগম্য না হওয়ার ব্যর্থতার দায় তার। নিজে স্বার্থ হাসিল করতে অসাধু পন্থায় আইন অবজ্ঞা করে জয়ী হলে প্রশাসনকে বাহবা দিতেন। আর সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রশাসনের কিছু মানুষ কাজ করলে তারা হয়ে যায় দুর্নীতিবাজ। এ দেশে সব সাধারণ মানুষ ঘুষ দেওয়ার রাস্তা জানে না। যদি তাই হত তাহলে সমগ্র প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তো বহু আগেই। 

টানা ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে। দেশের সকল কর্মকাণ্ডের দায়ভার নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে  তৃতীয়বারের মত অংশগ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে সরকারের চলমান কাজকে জনগণের সামনে ঢালাওভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা কোনোভাবে গ্রহনযোগ্য নয়। 

দুর্নীতিমূলকভাবে যদি কোন কাজ হয়েছে বলে মনে হয়, তাহলে তার জন্য বিচার চাইবার অধিকার জনগণ হিসেবে সবার আছে। তার জন্য আদালত, দুদুকসহ নানা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে দেশের সকল কার্য পদ্ধতিকে দুর্নীতিযুক্ত বলার অধিকার কারো নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ব্যক্তি বা বিষয়ে প্রশাসনকে অভিযুক্ত প্রমাণ করে ঘুষগ্রহণকারী এবং ঘুষ প্রদানকারীর শাস্তির বিধান রয়েছে। 

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার ও ভূমি ব্যবস্থাপনার দুর্নীতি আলোচিত বিষয়। এ অবস্থায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তির বিচার ও ভূমি ব্যবস্থাপনার সকল কার্যক্রমকে ঘুষের দ্বারা সম্পাদন করা যায় বলে বলাটা কোন শুভ সংকেত নয়। এটা রাষ্ট্রীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গ্রামের নিরীহ মানুষদের সম্পদ গ্রাস করার পায়তারা। তথাপি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্নই রয়ে যায়, "সরকারী কাগজ বিচারের রায় সব কি মূল্যহীন, জোর যার সম্পদ তার।"                             লেখক: কলামিস্ট

বিডি-প্রতিদিন/২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮/মাহবুব



এই পাতার আরো খবর