বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের মহাসচিব ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেছেন, দেশ থেকে ফ্যাসিবাদীরা পালিয়ে গেলেও তাদের অনেক দোসর এখনো রয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদকে যদি চূড়ান্তভাবে নির্মূল করতে না পারি তাহলে আমাদের লক্ষ্য অর্জন হবে না। ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে আপসের কোনো সুযোগ নেই। ফ্যাসিবাদকে সুযোগ দেওয়া মানে শত শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘গণমাধ্যম ও ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সিএমইউজে এ সভার আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন দৈনিক আমার দেশের ব্যুরোপ্রধান সিডিএ বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি, দৈনিক কালের কণ্ঠের ব্যুরোপ্রধান মুস্তফা নঈম, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুদ্দীন কাদেরী শওকত, একাত্তর টিভির ব্যুরোপ্রধান সাইফুল ইসলাম শিল্পী, দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম সেলিম, দৈনিক দিনকালের ব্যুরোপ্রধান হাসান মুকুল, সিনিয়র সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, মাহবুব রশিদ, কামরুল হুদা, ওয়াহিদ জামান, এসএ টিভির ব্যুরোপ্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস, দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরোপ্রধান নুরুল আলম মিন্টু, বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, সাংবাদিক শাহ নেওয়াজ রিটন, যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক মজুমদার নাজিম উদ্দীন।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, কারা ফ্যাসিবাদের দালাল, তা আমরা জানি। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে প্রশংসা করত, অথচ কোনো প্রশ্ন করত না। তেল মেরে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিত। মনে হতো প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন যেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, আমরা জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ভুলে যাইনি। আন্দোলনে কীভাবে নিরীহ শিক্ষার্থীদের গুলি করে পাখির মতো হত্যা করেছে। যারা ফ্যাসিবাদের দালাল তাদের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না।
কাদের গণি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের নিয়ে কথা বলতে হবে। সংবাদমাধ্যম গণমাধ্যম হতে পেরেছে কি না তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া দরকার। এখন বগলদাবা সাংবাদিক, সম্পাদকে দেশ ছেয়ে গেছে। তারা আমাদের সাংবাদিকদের মানমর্যাদা নষ্ট করছে। বিভিন্ন সুবিধার জন্য তারাই ফ্যাসিবাদীদের থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। একজন সৎ সাংবাদিক কখনো ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপস করে না। কখনো খামের জন্য অপেক্ষা করে না। আমরা (সাংবাদিকরা) কি ওয়াচডগ বা সমাজের অতন্দ্র প্রহরী হতে পেরেছি? আমরা পোষা কুকুর হয়ে গেছি। তাই তো ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে কাউকে কাউকে দেশ ছেড়ে পালাতে হচ্ছে। আমাদের ভুলগুলো আমাদের বলতে হবে। আজকে সময় এসেছে সৎ সাংবাদিকতা ফিরিয়ে আনা। ফ্যাসিবাদ যেখানে আসবে সেখানেই প্রতিবাদ করা। সাংবাদিকতাকে ছুড়ে ফেলে আমরা দলদাস হয়ে যাচ্ছি। হলুদ সাংবাদিকতা, তথ্য-সন্ত্রাস সঠিক সাংবাদিকতাকে ম্লান করে দিচ্ছে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার যেসব বিশ্বাসঘাতকতাদের কারণে এখনো হয়নি তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন- দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা ও প্রথিতযশা সাংবাদিক শফিক রেহমান নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে তৎকালীন সময়ে কোনো মিডিয়া তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি।
সভায় জাহিদুল করিম কচি বলেন, মহান বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছে। বিগত সরকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। যেসব সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের পুনর্বাসন করার দাবি জানান তিনি। এ সময় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা উল্লেখ করে অবিলম্বে তার অপসারণও দাবি করেন তিনি।