নেত্রকোনায় দুইজন চিকিৎসক সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরপরই এবার প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত দু’জনই কেন্দুয়া উপজেলায়- একজন পুলিশের ওসি ও আরেকজন সিভিল প্রশাসনের ইউএনও। দুইজনই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন নেত্রকোনার সিভিল সার্জন।
কেন্দুয়া উপজেলায় আক্রান্ত দুই কর্মকর্তাই করোনাকাল শুরুর পর থেকে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে দিবারাত্র কাজ করেছেন। ধান কাটার শ্রমিক সাজিয়ে যাত্রী পরিবহনের একাধিক ঘটনাও এ দুজনে মিলে ধরেছেন এবং যাত্রীদের অধিকাংশ ছিল ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী ও চট্টগ্রাম ফেরত। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও জরিমানা করেছেন অসংখ্য ঘটনার। ত্রাণ বন্টন ও বিতরণ থেকে শুরু করে করোনা আক্রান্ত লোকদের বাড়িতে নির্ভয়ে পদচারণা করেছেন।
এই দুজন কর্মকর্তার করোনা আক্রান্তের খবর প্রকাশে মঙ্গলবার সকাল থেকে পুরো কেন্দুয়া জুড়ে শুরু হয়েছে এক অজানা আতঙ্ক। উপজেলার অধিকাংশ মানুষই মনে করেছেন এই দুই কর্মকর্তা করোনাকালে এমন জায়গা নেই যে, তাঁরা দু’জনে যাননি। ফলে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ে কেন্দুয়া উপজেলাবাসীদের মনে আতঙ্কের শুরু হয়েছে।
গত সোববার রাতে নেত্রকোনা সিভিল সার্জনের ফেইসবুক পেইজের পোস্ট থেকে জানা যায়, জেলায় নতুন করে ১১ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। কেন্দুয়া উপজেলার ইউএনও, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও মজলিসপুর গ্রামের একজন। আটপাড়া উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য কর্মী। মদন উপজেলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং বারহাট্টা উপজেলায় স্টেশন রোডের বসবাসকারী তিনজন।
এ পর্যন্ত ১৭৩০টি নমুনা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তারমধ্যে ১৪৪৮টির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এরমধ্যে জেলায় মোট আক্রান্তে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ জনে।
সির্ভিল সার্জন ডা. মো. তাজুল ইসলাম খান জানান, ৮৫ জনের মধ্যে ৬ জন ডাক্তার, ১ জন ইউএনও, ১ জন ওসি, ৯ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ বাকি অধিকাংশই গার্মেন্টস কর্মী। যারা করোনাকালে মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে।
কেন্দুয়ার ওসি এবং ইউএনও পারিবারিক হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত দুই ডাক্তারসহ ২৭ জনের করোনা নেগেটিভ হয়ে বাড়িতে আছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এদিকে ৬ জন করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের মধ্যে পূর্বধলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত দুইজন চিকিৎসক ২১ দিন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থেকে শনিবার বাড়ি ফিরেছেন।
তাঁরা দুজনই হাসপাতাল ছাড়ার পূর্বে পূর্বধলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার সহ অন্যান্য ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদেরকে ফুলের শুভেচ্ছা ও করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ