নাটোর শহরের নিচু এলাকাগুলো একটু বৃষ্টিতেই ডুবে যায়। সেই সাথে যোগ হয়েছে দৈনন্দিন বর্জ্য। ফলে দেড়শ’ বছরের পুরাতন পৌর এলাকার পয়ঃপ্রণালী ও পানি নিষ্কাশন দুরূহ হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় নাটোর পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫২০ মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের চলতি বছরই শেষ হবার কথা প্রকল্পটির কাজের। তবে বাদ সেধেছে শহরের বিভিন্ন খাল-জলা ও ড্রেন দখল হয়ে ভরাট হয়ে পড়ায়। এসব ড্রেন বা জলাশয় সংস্কার করতে গিয়ে পৌরসভা কর্তৃক নিযুক্ত ঠিকাদারকে বিপাকে পড়তে হয়। খোদ মেয়রকে এসব কাজের তদারকি করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রভাবশালীদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে। ফলে ইতিমধ্যে ড্রেন নির্মাণসহ খাল ও জলা সংস্কার কাজ বস্তুত থমকে গেছে।
প্রভাবশালীরা ড্রেন বা খাল-জলা দখল করে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। এসব ভবনের কারণেই এগোচ্ছেনা ড্রেনের নির্মাণ কাজ। আর এত করে নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে।একারনে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধিরও আশংকা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও অজ্ঞাত কারনে তা থমকে গেছে। উচ্ছেদ অভিযানের পরও সরকারী নালা-জলা-খাল সহ ড্রেনের ওপর এখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বহুতল ভবন। অভিযোগ উঠেছে, ড্রেন নির্মাণের জন্য অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হলেও প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে বিপরীত আচরণ করা হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ, অবৈধ স্থাপনা বা বহুতল ভবনের মালিক প্রভাশালী ব্যক্তিদের স্বজনরা স্থানীয় প্রশাসনের তুলনায় আরো বেশি শক্তিশালী। তাদের কেউ কেউ আইন শৃংখলা বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। আবার কেউ কেউ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্তা ও রাজনৈতিক বিক্তিত্ব। ফলে উচ্ছেদ অভিযানের সময় অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা যেভাবে ‘ডন্ট কেয়ার’ ভূমিকায় শুরু করেছিলেন তা অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ থমকে গেছে।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল জানান, ড্রেনের প্রশস্ত হবে ৮ ফুট করে। নকশানুযায়ী ড্রেনের দু’পারে প্রচুর জায়গা থাকার কথা। কিন্তু দখলের কারণে ড্রেনের কাজও করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রভাবশালী হওয়ায় এসব অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গা হচ্ছেনা। প্রথমে মাফযোগ করে যে স্থানে লাল দাগ দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তীতে তা থেকে সরে গিয়ে অন্যস্থানে দাগ দেওয়া হয়েছে।
মেয়র উমা চৌধুরী জানান, অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। চিতলগাড়ি জলা দিয়ে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও অবৈধ দখলের কারনে কাজের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু জায়গাগুলি সরকারের ,তাই জেলা প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ড্রেনের মাঝখানে বহুতল ভবনের বিষয়টি দেখছেন জেলা প্রশাসন। তবে শুনেছেন আর এস রেকর্ডে ভবন দু’টি নিজেদের জায়গায় নির্মান করার দাবি করেছেন ভবন মালিকরা।
সহকারী কমিশনার (ভুমি) সদর উপজেলা শামীম ভুঁইয়া অনিয়মের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বলেন, বহুল ভবন দু’টি নিজেদের জায়গায় রয়েছে বলে এমন দাবি করে স্বপক্ষে দলিল উপস্তাপন করেছেন। আর রেকর্ডে ভবন মালিকদের নামেই রয়েছে। আর ওই স্থানটি একটি পয়েন্ট রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে,কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছেনা। প্রয়োজনে পুনরায় মাপযোগ করা হবে। দখলকারীরা যতই শক্তিশালী হউন না কেন দখল উচ্ছেদ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার