টাঙ্গালের মধুপুর বনাঞ্চালের গারো সম্প্রদায়ের লোকজন শত বছরের পুরনো গ্রামের ঐতিহ্যকে ধারণ করে উদযাপিত হলো গারোদের অন্যতম জাতীয় উৎসব ওয়ানগালা বা নবান্ন। বছরের প্রথম নতুন ফসল ঘরে না তুলে তা প্রথমেই স্রষ্টার কাছে উৎসর্গ করে প্রার্থনা করা হয়। গারো সম্প্রদায়ের এ অনুষ্ঠানকে বলা হয় ওয়ানগালা, বাংলায় যার অর্থ নবান্ন।
রবিবার দিনব্যাপী সাইনামারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল আয়োজনে ঐত্যিবাহী সামাজিক এ উৎসব অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনায় উদ্যাপন করেন গারো সম্প্রদায়।
আদিকাল থেকেই গারোদের বিশ্বাস, মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য তার প্রাকিৃতিক যা কিছু সম্পদ সবই দেবতার সৃষ্টি এবং দান। গারোদের বিশ্বাস, দেবতা তাতারা পৃথিবী, সালজং পার্থিব ফসলাদি এবং সুষিমি রোগ নিরাময়কারী ও ঐশ্বর্য প্রদানকারী। তাই এসব দেবতাদের দানকৃত সম্পদ বা ফসলাদি ব্যবহার করার আগে আদিবাসী প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ গারোরা তাদের উৎপাদিত ফসলাদি সুষিমি, সালজংসহ ওইসব দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। দেবতাদের উৎসর্গ করা ছাড়া গারোরা তাদের ফসল ব্যবহার করেন না। ফসল উৎসর্গের এই আনুষ্ঠানিকতাই গারো ভাষায় ওয়ানগালা।
ওই উৎসবকে ঘিরে দিন শুরু হতেই স্কুল মাঠের এক প্রান্তের সাজানো মঞ্চে কামাল(পুরোহিত) জলে মন্ত্র পড়ে ফুঁদিয়ে জলকে পবিত্র করেন এবং ওই জল ভক্তদের উদ্দেশ্যে সিঞ্চন করে বলেন “এই পবিত্র জলের সংস্পর্শে যারা আসবে তারা যেন পবিত্র হয়ে উঠে, ইশ্বরের সন্তান হয়ে ওঠে।” পরে ওখান থেকে বাদ্য আর সংগীতে নেচে গেয়ে অতিথিদের মূল মঞ্চে নেয় গারো মেয়েরা। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য!
খ্রীষ্টযোগের পর মন্ত্র,সংগীত আর নৃত্যে উঠে আসে গারো সংস্কৃতি। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে গারোদের জীবন ঘনিষ্ঠ সংস্কৃতি উঠে আসে রুগালা, গোরীরুয়া, গ্রিক্কা, বিসাদিমদিমা, চাম্বিল মেসা, নকগাখা, চাওয়ারী সিকগা ইত্যাদি শিরোনামের অনুষ্ঠিত পার্বিক উপস্থাপনায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পীরগাছা ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার লরেন বিভারু সিএসসি। বেনেডিক্ট সিমসাং এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাইম এসেট গ্রুপ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন