বগুড়ার মরিচ চাষে এবার ফলনে ও দামে হাসতে শুরু করেছে চাষিরা। জেলায় বরাবরই ভাল উৎপাদন হওয়া মরিচ এবার বাম্পার ফলন পেয়েছে। জেলার যমুনা চর এলাকার চাষিরা মরিচ শুকিয়ে বিক্রি শুরু করেছে।
জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় চাষিরা ভাল ফলন পাচ্ছে। শুকনা মরিচ আকারে ফলন পেতে যাচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন। হিসাব মতে জেলায় এবারও কোটি টাকার বাজার বসবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বগুড়া জেলায় চলতি মৌসুমে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে মরিচ চাষের জমি বেড়েছে। এ কারণে কৃষি সম্প্রসারণের টার্গেট এর চেয়েও বেশি জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। বেশির ভাগ জমি থেকে চাষিরা কাঁচা আকারে মরিচ বাজারে বিক্রি করেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মরিচ চাষিরা ক্ষেতের পরিচর্যা ও গাছ থেকে মরিচ তুলে শুকিয়ে নিয়েছেন। ফলন ভাল হওয়ার কারণে বর্তমান বাজারে মরিচের দামও হাতের নাগালে রয়েছে। অর্থকরী ফসল মরিচ চাষ করে কৃষক লাভবান হয় বলে মরিচ চাষে তারা আগ্রহি।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি, কাজলা, কর্ণীবাড়ি, বোহাইল ইউনিয়ন সম্পূর্ণ এবং হাটশেরপুর, চন্দনবাইশা এবং সদর ইউনিয়ন আংশিক যমুনার চরা ল নিয়ে গঠিত। এসব এলাকায় ভাল মরিচ চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে সারিয়াকান্দির মরিচ চাষিরা তাদের উঠানে, নদীর তীরে, বাড়ির পাশে উঠান তৈরী করে রোদে মরিচ শুকিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাজারে শুকনা মরিচ বিক্রি শুরু করেছেন। শুকনা মরিচ বিক্রি করতে পেরে তারা আনন্দিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা বলছেন জেলায় এবার প্রায় ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। পরে জমি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ হাজার ৬০০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। কিন্তু জমি ও ফলন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মরিচের উৎপাদন পাওয়া যাবে প্রায় ১৫ মেট্রিক টন। শুকনা আকারে কিছু কিছু নতুন মরিচ পাওয়া যাচ্ছে। চৈত্র মাসে জেলায় শুকনা মরিচে ভরে যাবে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের মরিচ চাষি আবদুস সালাম জানান, আমনের ধান ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর আলু ৪০০ টাকা মন। এই দামে আলু ও ধান বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয়েছে। বাজারে এখনো আলুর দাম বাড়েনি। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মরিচ চাষ করে এবার ভাল দাম পাওয়ার আশা করছে। কাঁচা আকারে মরিচ বিক্রি করে খরচ ও লাভ পাওয়া গেছে। এবার শুকনা মরিচ বিক্রি হবে মান অনুযায়ি ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা মন।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সালাহ উদ্দিন সরদার জানান, বগুড়ার সোনাতলায় ১৩২০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। উপজেলার কৃষকেরা তিনটি হাইব্রিড জাতের মধ্যে সনিক, ১৭০১ ও বিজলী প্লাস এবং স্থানীয় উন্নত জাতের মরিচের ব্যাপক চাষ করেছে। মরিচের বীজ বপনের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ৬০-৭০ দিনের মধ্যে কৃষক গাছ থেকে মরিচ উত্তোলন শুরু করে। এটি একটি অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল। সোনাতলা উজেলার যমুনা, বাঙালী নদীর বন্যার পর চরা লে এবং অন্য জমিতে পলি জমায় প্রতিবছর মরিচের বাম্পার ফলন হয়। প্রতিবিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৫ মন মরিচ উৎপন্ন হয়। সোনাতলা উপজেলায় এবার শুকনা মরিচ এর ফলন পাওয়া যাবে ২ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, জেলায় এবার ৭ হাজার ৬০০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। কিন্তু এই ফলন বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর