৩০ মার্চ, ২০২০ ১১:১০

সৈকতে রিদওয়ানের সঙ্গে ঘুমানো সেই কুকুরটিও এখন ডিসির বাংলোর অতিথি!

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সৈকতে রিদওয়ানের সঙ্গে ঘুমানো সেই কুকুরটিও এখন ডিসির বাংলোর অতিথি!

কুকুরের সঙ্গে ঘুমিয়ে আছে রিদওয়ান

করোনায় ‘লকডাউন’ অবস্থায় সৈকতের বালিয়াড়িতে অভুক্ত ভাবে কুকুরের সাথে ঘুমানো শিশু মো: রিদওয়ান কক্সবাজারের ডিসির ডাক বাংলোতে শনিবার রাতে আশ্রয় পেয়েছে। এর একদিনের মাথায় ডাক বাংলোর অতিথি হয়ে এসেছে চতুষ্পদি প্রাণী হয়েও অসহায় শিশু রিদওয়ানকে বিশ্বস্ত সঙ্গীর মতো সঙ্গ দেয়া কুকুরটিও। রিদওয়ান ও কুকুরটি মমতায় ডাকবাংলোতে একে অপরের সাথে সময় কাটাচ্ছে। এ দৃশ্য পুরোনো দিনের কাল্পনিক গল্পকেও হার মানিয়েছে বলে মনে করছেন ডাক বাংলোর অধিবাসীরা।

সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসক ও তার বাংলোর সবার অকৃত্রিম মমতায় পরিচ্ছন্ন জীবন পেলেও শিশু রিদওয়ান তার বিপদের সঙ্গীকে ভূলেনি। তারই ইচ্ছেতে বিচ কর্মীর সহযোগিতায় রবিবার সন্ধ্যায় রিদওয়ান নিজে গিয়ে কুকুরটিকে খুঁজে বাংলোতে নিয়ে আসে। ডাক বাংলোতে পৌঁছে খোলা মাঠের বেঞ্চিতে বসা রিদওয়ানের পা ঘেঁষে কুকুরটিও বসে সময় কাটাচ্ছিল। এ দৃশ্য ‘মানুষ এবং প্রাণী কূলের ভালোবাসা’র গল্পকে নতুন করে জাগরুক করেছে বলে মন্তব্য ডাকবাংলোর অধিবাসীদের। 
  
জানাযায়, বিশ্ব আতংক করোনা সংক্রমণ রোধে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার সৈকতসহ পর্যটন স্পটে বেড়ানো নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে সবধরনের পরিবহন, দোকানপাট ও কর্মক্ষেত্র। ফলে একপ্রকার লকডাউন অবস্থায় পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত, দিনজীবী ও পর্যটক বা বিচ এলাকার খাবার হোটেলের উচ্ছিষ্ট চেয়ে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো। এ লকডাইন অবস্থায় কোথাও না গিয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে কুকুরের সঙ্গে অভুক্ত ঘুমিয়ে দিন পার করছিল ৬-৭ বছরের শিশু রিদওয়ান। টহলে গিয়ে বালিয়াড়ির লাইটের আলোতে অচেতন ঘুমে থাকা রিদওয়ান ও কুকুরের ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। ২৬ ও ২৭ মার্চ মধ্যরাতে তোলা পৃথক দুটি ছবি ভাইরাল হবার পর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন পর্যটন সেলের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচকর্মীদের মাধ্যমে খুঁজে শনিবার ভোররাত দেড়টার দিকে ডিসির ডাকবাংলোতে আনেন রিদওয়ানকে। সেখানে পরিচ্ছন্ন  জামা পরিয়ে নিজের তত্বাবধানে পছন্দের খাবার খাওয়ান জেলা প্রশাসক। তা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ফেসবুকে আপলোড করলে সবশ্রেণির মানুষের প্রশংসায় ভাসেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

আফিউদ্দিন নামে ডাকবাংলোর এক কর্মজীবী জানান, রবিবার সকাল থেকেই শিশু রিদওয়ান বার বার কুকুরটি নিয়ে আসার বায়না ধরে। ফলে, ডিসি স্যারের নির্দেশে বিচকর্মীরা রিদওয়ানকে সাথে নিয়ে রবিবার বিকেলে সৈকত এলাকায় যান। খোঁজা-খুঁজির পর সন্ধ্যার দিকে কুকুরটিকে পেয়ে অবশেষে ডাক বাংলোতে নিয়ে আসে তারা। 

তিনি আরো জানান, কুকুরটিও সুবোধ বালকের মতো রিদওয়ানের পেছন পেছন বাংলোতে চলে আসে। এবং রিদওয়ান বাইরের বেঞ্চিতে বসলে তার পা ঘেষে বসে আরাম করছিল কুকুরটি। এ দৃশ্য সবাইকে হতবাক করেছে।  

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, মানবতা প্রকৃতির অকৃত্রিম দান। শুধু মানুষে মানুষে নয়, প্রাণীকুলে বা প্রাণী ও মানুষের মাঝেও এর প্রকাশ ঘটে। দায়িত্ববোধ থেকেই অসহায় রিদওয়ানের অবস্থান ডিসির ডাকবাংলোয়। কিন্তু কুকুরটির আসা প্রাণী-মানুষের ভালোবাসার বন্ধনে। এটি মানবতার জয়গান। বিপদাপন্ন অসহায়দের সহায় হওয়া প্রশান্তির কাজ।

বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর