৫৮ বছর পার করা দেশের সর্ববৃহৎ জয়পুরহাট চিনিকলের স্থান এখন রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের তালিকায়। ক্রমাগত লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে চিনিকলটি কোনরকম উৎপাদন প্রক্রিয়া ধরে রাখলেও শ্রমিক কর্মচারীতের শঙ্কা যে কোন সময় এই চিনিকলটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
২০২০-২১ আখ মাড়াই মৌসুমে জয়পুরহাট চিনিকল ৬০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আখ মাড়াই শুরু হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর।
জয়পুরহাট চিনিকলে বর্তমানে ৮ কোটি টাকার ১ হাজার ৩১৮ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারির বেতন বকেয়া রয়েছে ৪ মাস ধরে। বেতন না পাওয়ায় কর্মচারি শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
গত আখ মাড়াই মৌসুমে কৃষকের টাকা পরিশোধ করা হলেও আখ বিক্রি নিয়ে কৃষকদের ক্ষোভের অন্ত নেই। উত্তর জয়পুর গ্রামের মাহবুব রহমান জানান, এক বছর জমিতে আখ চাষ করে আখ বিক্রি করতে পারেন না সঠিক সময়। এরপর আখ বিক্রির টাকা নিতে মাসের পর মাস দেরি করতে হয়। এত ঝামেলের কারণে এবার তিনি মাত্র এক বিঘা জমিতে আখ লাগিয়েছেন। এর আগে তিনি ১০/১২ বিঘা জমিতে আখ চাষ করতেন। এবারেও মিলগেটে আখের মূল্য কুইন্টাল প্রতি ৩৫০ টাকা এবং বাহিরের কেন্দ্রগুলোতে ৩৪৩ টাকা।
সর্বশেষ মৌসুমে শুধুমাত্র আখের অভাবে ৪১ দিন চিনিকলটি চালু ছিল। এ অল্প সময়েই ৫৪ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৫৩৪ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক চিনিই অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে।
জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক জুয়েল জানান মোট এক হাজার চৌত্রিশ জন কর্মকর্তা কর্মচারি চলতি মাসসহ ৫ মাসের বেতন বাবাদ ৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে এছাড়া যারা অবসরে গেছেন তাদের পাওনা রয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা ।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু বকর জানান, করোনা পরিস্থিতি আর চিনিকলে উৎপাদিত চিনির তুলনায় খোলা বাজারে আমদানি করা চিনির মূল্য কিছুটা কম হওয়ায় চিনিগুলো বিক্রি হচ্ছে না। তবে খুব শিগগিরই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে ভ্রান্ত চিনিশিল্পনীতি, আখচাষিদের সুযোগ সুবিধা না দেওয়া এবং মাথাভারী প্রশাসনের কারণে প্রতিবছর চিনি শিল্পে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাদের মতে দেশে চিনিকলগুলির উৎপাদিত চিনি বিক্রির সঠিক ব্যবস্থাপনা না রেখে ঢালাওভাবে “র” সুগার আমদানীর ব্যবস্থা করে দেওয়া, “র” সুগারের নামে কালোবাজারে ফ্রেস চিনি বিদেশ থেকে নিয়ে আসার কারণে ব্যবসায়ীদের কারসাজির মধ্যে পড়েছে চিনিকলগুলি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল