উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানির স্রোত বাড়ার সাথে সাথে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ভাঙন। মানচিত্র থেকে কয়েকটি ইউনিয়ন হারাতে বসছে। কয়েক যুগ ধরে ভাঙনের ফলে হাজার হাজার একর জমি নদীতে বিলিন হয়ে লক্ষাধিক মানুষ তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। কিছু পরিবার সরকারী খাস জমি বরাদ্দ পেলেও সরকারী নিয়ম নীতির ধাপ অনুসরণ করতে না পারায় নিজ দেশে যেন পরবাসী হয়ে আছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গ্রাম নদী ভাঙনে হারিয়ে গেছে।
বিষখালী নদীর ভাঙনে বুধবার ঝালকাঠির পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের অর্ধেকটা নদীতে হঠাৎ করে বিলীন হয়ে গেছে। এই নদী ভাঙনের দৃশ্য ফেসবুকে লাইভ দেওয়ার সময় সাইক্লোন সেল্টার নদীতে ধ্বসে পরে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয়েছে। ৫ দিনেও তাকে উদ্ধার করা যায়নি। পেনাবালিয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী অংশ অব্যহত ভাঙনের মধ্যেও অবৈধ বালু উত্তোলন থেমে নেই। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিয়ম বর্হিভূত বালু উত্তোলন করে আসছে। ভাঙন কুল থেকে মাটি কেটে ইট ভাটা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের বাকী অংশসহ বাদুর তলা বাজারের সম্পূর্ন বিলীন হওয়ার আশংকা করছে এলাকাবাসী। হুমকির মুখে রয়েছে বিষখালীর তীরবর্তী বড়ইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বড়ইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাঠবড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কয়েকটি বাজার, বেশকিছু বসতবাড়ী, মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনা ও ফসলি জমি।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন নদী ভাঙন থেকে জেলার বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
নদী ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ভাঙনে পৈত্রিক ভিটা মাটি হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ভাঙনে সব হারিয়ে কোনো সহায়তা না পেয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে থাকতে হচ্ছে অনেককে। সাম্প্রতিক ভাঙনে পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের অর্ধেকটা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাংশ এবং একটি সমজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা, ফসলি জমি, বেশকিছু বসতবাড়ী, অসংখ্য গাছপালা, কয়েশ মিটার সড়ক নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গছে। যেকোন মুহূর্তে অবশিষ্ট অংশ আকস্মিক ভাঙনে হারিয়ে যাবে এমন আশংকায় স্থানীয়দের ঘুম হারাম হয়েছে।
ঝালকাঠির পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) মো. রাকিব হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জেলায় মোট ১৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা রয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু হয়েছে। ডিপিপি অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী বাধ দিতে হবে। অস্থায়ী বাধ দিয়ে ভাঙন রোধ করা যাবে না। ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল