সম্প্রতি মুক্তি পেল অপু বিশ্বাস অভিনীত ‘ডেয়ারিং লাভার’। কিন্তু যারা গর্ব করে বলেন, অপুর ছবি মানেই হিট তাদের মাথা আবারও নিচু করলেন এই নায়িকা। ছবিটি বক্স অফিসে মুখথুবড়ে পড়ল। আবারও সুপার ফ্লপ হলেন অপু বিশ্বাস। অথচ এক সময় শাকিব-অপু জুটির ছবি মানেই ছিল সুপার হিট না হলেও হিট। ২০০৬ সালে ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে প্রথম জুটিবদ্ধ হন শাকিব-অপু। ছবিটি দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় ঢালিউডে নতুন জুটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাদের। এরপর একনাগাড়ে তাদের নিয়ে ছবি নির্মিত হতে থাকে। ২০০৮ সালে নায়ক মান্নার আকস্মিক মৃত্যু ও রিয়াজের ফিল্ম ক্যারিয়ারে ভাটা পড়লে ঢালিউডে শাকিব-অপুর একচেটিয়া বাজার তৈরি হয়।
চলচ্চিত্রকাররা এসব কথা জানিয়ে বলেন, অপু কিন্তু শাকিব খানের কাঁধে ভর করেই নায়িকা হয়েছেন। অর্থাত্ শাকিবের দর্শকপ্রিয়তার কারণে সেই ছবিতে অপু থাকায় সবার ধারণা অপুরও দর্শকগ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু শাকিববিহীন অপুর ছবির ব্যর্থতা এই ধারণা ভুল করে দিয়েছে। এ ধরনের অনেক ছবির মধ্যে কাজী মারুফের সঙ্গে ‘বড় লোকের ছেলে গরীবের মেয়ে’, নাঈম খানের সঙ্গে ‘আমার জান আমার প্রাণ’, অমিত হাসানের সঙ্গে ‘কে আপন কে পর’ ছবিগুলোর ব্যবসায়িক ব্যর্থতা অন্যতম। ধূর্ত অপুও তাই ঢালিউডে টিকে থাকতে শাকিব খানের সঙ্গে হূদয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ নিয়ে চলচ্চিত্রকার ও পত্রপত্রিকাগুলো এখনো সরব রয়েছে। অপু কখনো এ খবরের প্রতিবাদ করেননি। উল্টো স্বীকার করেছেন, ‘শাকিবের কারণেই আমি নায়িকা অপু হয়েছি।’
সহজ-সরল শাকিবও তার ছল-ছাতুরিতে সাড়া দিয়ে একসময় নির্মাতাদের সাফ জানিয়ে দেন অপু না থাকলে সেই ছবিতে অভিনয় করবেন না তিনি। ফলে শাকিবের ৯৯ ভাগ ছবির নায়িকাই অপু। এতে মেদবহুল শরীর এবং অভিনয়ের ‘অ’ও না জেনে কেবলই শাকিবের কল্যাণে রাতারাতি নায়িকা বনে যান অপু। কিন্তু এ অবস্থাও বেশি দিন চলেনি। ২০১১ সালের পর থেকে শাকিব-অপু জুটির বেশির ভাগ ছবিই ফ্লপ হতে শুরু করে। নির্মাতারা এর জন্য দায়ী করেন অভিনয়ে অজ্ঞ বেঢপ শরীরের নায়িকা অপুকে। তাকে নিয়ে ছবি নির্মাণে অনীহা দেখা দেয় নির্মাতাদের মধ্যে। তাই ২০১২ সালের শেষ দিক থেকে বেকার হতে থাকেন এই নায়িকা। এ সময় তার আগে কাজ শেষ করা ছবিগুলো মুক্তি পেলেও সেগুলো বক্স অফিসে সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে নিজের অজ্ঞতা বুঝতে পেরে বেকার অপু শারীরিক সৌন্দর্য উদ্ধারে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
এক বছরের মতো চলচ্চিত্র থেকে দূরে থেকে ইয়াবা সেবন, জিম, ডায়েট কন্ট্রোল, লেজার ট্রিটমেন্ট ইত্যাদির পেছনে ছুটতে থাকেন। অবশেষে স্লিম হয়ে ২০১৩ সালের শেষ দিকে আবার ঢালিউডে ফেরেন। অবশ্য গত বছরের রমজানের ঈদে শাকিব-অপু অভিনীত ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিটি শাকিবের অভিনয়গুণে ও বদিউল আলম খোকনের দক্ষ নির্মাণে সফল হলে আবারও নিজেকে সফল মনে করতে থাকেন এই ব্যর্থ নায়িকা। এমন সব ক্ষোভের কথা জানিয়ে বেশ কজন নির্মাতা বলেন, শুধু অপুর কারণেই চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী গল্পে নির্মিত ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রটি সুপার ফ্লপ হয়। কারণ পার্বতীর মতো সহজ-সরল নারী চরিত্রে অপুকে একেবারেই বেমানান ঠেকেছে। এ ধরনের চরিত্রে সত্যিকারের অভিনয় শিল্পী প্রয়োজন।
নির্মাতারা বলছেন, স্লিম হয়ে নতুনরূপে আবির্ভূত হওয়ায় আবারও অপুকে নিয়ে তারা বেশ কিছু ছবির কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত ‘ডেয়ারিং লাভার’ ছবিটি ফ্লপ হয়েছে। এতে নির্মাতারা আবারও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন। কারণ অপুর সঙ্গে শাকিব থাকলেও এখন সেই ছবি আর চলে না। বরং এতে শাকিবের ক্যারিয়ারেই ভাটার শব্দ শোনা যায়। নির্মাতাদের কথায় অপুকে কখনো হিট নায়িকা বলা যায় না। শাকিবের কল্যাণেই অতীতে তার যত অর্জন। কিন্তু এভাবে অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে বেশি দিন টেকা যায় না, তা আবারও প্রমাণ করলেন সুপার ফ্লপ অপু বিশ্বাস।