বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবনের নির্মাণ কাজ এ বছর শেষ হচ্ছে না। সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে আর্কাইভ কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের জুনেই আর্কাইভ ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আকতারুজ্জামান বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১১ সালের জুলাইতে নির্মাণ কাজ শুরু এবং ২০১৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একনেকের বৈঠকে পরিকল্পনা পাস, দরপত্র আহ্বান, সাইট হস্তান্তর, বস্তি উচ্ছেদসহ প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতে এক বছর সময় বেশি ব্যয় হয়। তাই নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাইতে। আশা করছি ২০১৫ সালের জুনের আগেই ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে। ২৮ হাজার ৫০০ বর্গফুটের সাত তলা ভবনের তিন তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে এখন। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭৫ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠার পর ৩৬ বছর ধরে ভাড়া করা ভবনে কাজ চালাতে গিয়ে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে হোঁচট খায় প্রতিষ্ঠানটি। এতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে সোনালি যুগের কালজয়ী চলচ্চিত্র সংরক্ষণ। বারবার বাড়ি বদল করতে গিয়ে সংরক্ষিত অনেক ছবিই নষ্ট হয়েছে, স্থান সংকুলান না হওয়ায় বেশি পরিমাণে ছবি সংরক্ষণ করা যায়নি এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রার অভাবেও অনেক ছবি নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া আর্কাইভের প্রকৃত উদ্দেশ্যও বাস্তবায়ন হয়নি। আকতারুজ্জামান বলেন, আর্কাইভ কর্তৃপক্ষ ও চলচ্চিত্রকারদের দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও কোনো সরকার সংস্থার নিজস্ব ভবন নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমলে নেয়নি। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনে একাধিকবার এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর সরকার অবশেষে এ ব্যাপারে মনোযোগী হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় 'ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ'।
১৯৮৪ সাল থেকে এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি 'বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ' নামে কাজ করছে। ১৯৮০ সালে ব্রাসেলসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব ফিল্ম আর্কাইভসের সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। সরকার ১৯৯৩ সালে ফিল্ম আর্কাইভকে আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকায় 'এফ-৫' চিহ্নিত ১.৮৬ একর জমি বরাদ্দ দেয়। সে সূত্রে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জমির মূল্য বাবদ দুই কোটি টাকা পরিশোধ করে।
সাত তলা ভবনের প্রতি তলায় থাকবে প্রজেকশন হল, চতুর্থ তলায় ফিল্ম ল্যাবরেটরি ও মিউজিয়াম, ফিল্ম হাসপাতাল, চেকিং, কালার ও সাউন্ড কারেকশন, সংরক্ষণাগার, গবেষণা কক্ষ, সেমিনার হল, গ্রন্থাগার ও মিলনায়তনসহ চলচ্চিত্র সংরক্ষণে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে। থাকছে চলচ্চিত্রবিষয়ক সেমিনারের জন্য কক্ষ এবং আধুনিক সম্মেলন কক্ষ। এ ছাড়াও ভবনে থাকবে পাঁচটি প্রেক্ষাগৃহ। ৫০০ আসনের একটি এবং ৪০০, ৩০০, ২০০ ও ১০০ আসনের চারটি প্রেক্ষাগৃহ রাখা হবে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ শাহবাগের জাতীয় বেতার ও সম্প্রচার ভবনের তৃতীয় তলায় অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই স্থান সংকটসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির।
প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও ফিল্ম আর্কাইভ নিজস্ব ভবন পাচ্ছে। এ আনন্দ চলচ্চিত্রকারসহ আমাদের সবার। এখন সময় মতো কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। তাই অ্যাডহক ভিত্তিতে নির্মাণ কাজ চলছে। ফলে চলচ্চিত্র সংরক্ষণ ও গবেষণার ব্যাপারে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।