কোনোভাবেই কাটছে না প্রেক্ষাগৃহের দৈন্যদশা। পরিবেশের অভাবের জন্য সবশ্রেণির দর্শক ছবি দেখতে যেতে পারছে না। প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারে সরকারের অনুদান দেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে প্রেক্ষাগৃহ মালিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং দর্শক চরম বিপাকে পড়েছে। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা এবং প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দর্শকের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও এ কারণে হিন্দি ছবি 'ওয়ানটেড' দেখতে সব শ্রেণির দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যেতে পারছে না।
চলচ্চিত্রকারদের অভিযোগ, দেশীয় চলচ্চিত্রের বাজার মন্দ হওয়ার অন্যতম কারণ প্রেক্ষাগৃহের মন্দ পরিবেশ।
চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান জানান, গত বছরের ১১ অক্টোবর তথ্য, সংস্কৃতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চলচ্চিত্রকারদের বৈঠক হয়। এতে চলচ্চিত্রকাররা অনেক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার ছিল অন্যতম। কর্মকর্তারা বৈঠকে চলচ্চিত্রকারদের আশ্বস্ত করে বলেন, দর্শক যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রেক্ষাগৃহে যেতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে সরকার। যেসব মালিকের প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের সামর্থ্য নেই তাদের অনুদান দেওয়া হবে। এ ছাড়া নতুন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণেও অনুদান প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করবে সরকার। কিন্তু এখনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, গত বছরের ১২ আগস্ট তথ্য মন্ত্রণালয়ে চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ ও সংস্কারে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। এ জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়। বৈঠকের এজেন্ডা ছিল, 'ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন ব্যবস্থা চালুর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি অনুদান নীতিমালা প্রণয়ন।' বৈঠকে দুটি কমিটিও গঠন করা হয়। একটি সিনেমা হল নির্মাণ ও আধুনিকায়ন করার কারিগরি প্যাকেজ প্রণয়নে সাব কমিটি এবং অন্যটি সিনেমা হল নির্মাণে অনুদান নীতিমালা গঠনের প্রস্তাব সংবলিত টেকনিক্যাল কমিটি। বৈঠকে তথ্যসচিব মরতুজা আহমেদ বলেন, সার্বিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতি জেলায় তথ্য অফিসের নিজস্ব ভবন স্থাপন করা হবে। এসব ভবনে একটি করে সিনেমা হল থাকবে। পুরো বিষটি এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে।
মিয়া আলাউদ্দীন জানান, প্রেক্ষাগৃহের মন্দ পরিবেশ ছবি ব্যবসাসফল না হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি। এ কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও হিন্দি ছবি 'ওয়ানটেড' দেখতে সব শ্রেণির দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যেতে পারছে না। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পরিবেশ ও ভালো ছবির অভাবে দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহ চালাতে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন মালিকরা। এ কারণে গত ঈদের পর ঢাকায় যমুনা, ডায়না ও মেঘনা সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে দেশের আরও ১৮টি সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। এখন দেশে রয়েছে মাত্র ৩০৪টি সিনেমা হল।
মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, হাতেগোনা কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া বাকিগুলোতে পরিবেশের অভাবে দর্শক যেতে পারে না। আসলে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নির্মাতারা ভালো ছবি দিতে পারে না বলে দর্শক আসে না। তাই লোকসানি প্রতিষ্ঠান সংস্কারে টাকা আসবে কোথা থেকে। গত বছর সরকার প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার ও নির্মাণের জন্য অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এটি আমাদের শিল্পের জন্য কেবল ক্ষতিই বয়ে আনছে।
আনন্দ সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক শামসুল ইসলাম বলেন, ভালো ছবির অভাবে ব্যবসা মন্দ। তাই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে মধ্য ও উচ্চবিত্তের দর্শক এখানে পরিবার নিয়ে আসতে চায় না। প্রত্যাশা ছিল হিন্দি ছবি 'ওয়ানটেড' চালালে প্রচুর পরিমাণে লাভের মুখ দেখব। কিন্তু হলের পরিবেশের কারণে কাঙ্ক্ষিত দর্শক না পাওয়ায় সেই প্রত্যাশাও পূরণ হয়নি। দেশের অন্য প্রেক্ষাগৃহেরও একই চিত্র।
এদিকে মাল্টিপ্লেক্স প্রেক্ষাগৃহের দাবি চলচ্চিত্রকার ও দর্শকের দীর্ঘদিনের। কিন্তু দেশে মাত্র তিনটি সিনেপ্ক্স রয়েছে এবং সবকটি রাজধানীতে। এগুলো হলো বসুন্ধরা শপিংমলে স্টার সিনেপ্লেক্স, শ্যামলী ও যমুনা শপিংমলে ব্লক বাস্টার সিনেমাস। চলচ্চিত্রকার ও দর্শকের কথায়, এখন সিনেপ্ক্সে যুগ। কিন্তু আমাদের দেশ এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। এ অবস্থায় চলচ্চিত্রের ব্যবসা ভালো হবে কিভাবে।