শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে আসছে অনন্য মামুন পরিচালিত ‘অমানুষ’। এ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিরব। বনদস্যু ও এক গবেষককে নিয়ে গড়ে উঠেছে এ ছবির গল্প। এ ছবি ও অন্যান্য সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিরবের সঙ্গে কথা বলেছেন- শামছুল হক রাসেল।
►মিথিলার সাথে প্রথমবার ফিল্মে কাজ করা কতটুকু চ্যালেঞ্জের ছিল বা কেমিস্ট্রি কেমন ছিল?
আসলে মিথিলার সঙ্গে আমার চেনা-জানা অনেকদিনের। আগে থেকে দু’জনের বন্ধুত্বের কারণে কাজের ক্ষেত্রে বোঝাপড়াটা ভালো ছিল। সে কারণে কখন যে সিনেমাটা শুরু করে কখন যে শেষ হয়ে করেছি- তা একেবারেই টের পাইনি। শুটিংয়ের দিনগুলোতে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক বেশি কাজে দিয়েছে। এর ফলে আমাকে ও মিথিলাকে নিয়ে নির্মাতার কাজের কমফোর্ট জোনটা ভালো ছিল।
►ছবিটি নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে কতটুকু তফাৎ থাকছে?
আমরা অভিনেতারা আমাদের প্রতিটি কাজ নিয়েই আশাবাদী। তবে কিছু কিছু ছবি নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির তফাৎটা কম বেশি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ‘অমানুষ’ সিনেমা নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধানটা অনেক কম। এটি একটি তারকাবহুল কাস্টিংয়ের ছবি। ছবিতে আমার নায়িকা রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ছাড়াও মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, ডন, রাশেদ মামুন অপু, নওশাবা ও আনন্দ খালেদের মতো বড় বড় তারকা আছেন। এটাই মূলত সিনেমাটিকে আলাদা করেছে।
সাধারণত আমরা ছবিতে দেখি চার দেয়ালের ভেতরে ড্রামা, সাসপেন্স, অ্যাকশন ও রোমান্স। ছবির ইনডোরের দৃশ্য থাকে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ আর আউটডোরের দৃশ্য থাকে ২০-৩০ ভাগ। তবে ‘অমানুষ’ ছবি তার উল্টো। ছবি বাইরের দেশের ছবির মতো চিত্তাকর্ষণীয় করে তুলতে আউটডোরেই ৭০ ভাগ দৃশ্যের কাজ করা হয়েছে। দর্শকদের চোখে উপভোগ্য হবে- এই ভাবনা থেকে আউটডোরে জঙ্গলের ভেতরেই গল্পের দৃশ্যপট এগিয়েছে। যা গতানুগতিক ধারার বাইরে। এখানে দর্শক নতুনত্ব খুঁজে পাবে। এছাড়া ছবির বড় আকর্ষণ মিথিলা। প্রথমবারের মতো তাকে বড়পর্দায় দেখবে দর্শক, সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে।
►গতানুগতিক ধারার বাইরে ছবির প্রচারণা নিয়ে ভিন্ন কি পরিকল্পনা করলেন?
শুরু থেকেই সিনেমাটির প্রচারণা নিয়ে কিছুটা ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল। আমরা প্রথমেই চিন্তা করেছি, দেশের কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে সিনেমাটির প্রচারণার অংশ হিসেবে ক্যাম্পেইন করব। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে সেসব জায়গায় প্রচারণাও চালিয়েছি। বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনের মতো জনবহুল জায়গাগুলোতেও আমাদের ছবির প্রচারণা চলছে। মূলত যারা বাংলা সিনেমা প্রেমী- সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাদেরকে আমরা টার্গেট করে সিনেমার প্রচারণা সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।
►বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ওটিটি ও সিনেপ্লেক্সের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ কতটুকু?
ওটিটি প্লাটফর্ম নতুন নয়। কিন্তু এটাও সত্য, করোনায় এই মাধ্যমে দর্শক বেড়েছে। এরপরও সিনেমা হলে ছবি দেখার আবেদনটা এখনো রয়েছে। করোনার মধ্যে যখন দেশের অনেক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে গেছে, তখন বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ওটিটি নির্ভরতা বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ওটিটি বা অনলাইনে সিনেমা দেখায় পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি এখানকার দর্শক। বাংলা সিনেমার যারা প্রকৃত দর্শক তারা সিনেমা হলে ছবি দেখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বিগ স্ক্রিনে সিনেমা দেখা যতটা উপভোগ্য, বাসায় টিভি-কম্পিউটার ও মোবাইলে তা ততটা নয়। বাংলাদেশে ওটিটি বিষয়টি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এখনো সিনেমা হলে গিয়ে মানুষের ছবি দেখার প্রবণতা রয়েছে বলেই দেশে নতুন নতুন সিনেপ্লেক্স গড়ে উঠছে। এর মানে এই নয় যে ওটিটিকে অস্বীকার করছি। ওটিটিরও প্রয়োজন আছে, এ মাধ্যমে যেমন সম্ভাবনা রয়েছে তেমন চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
►সিনেমার এই মন্দা অবস্থায় উৎসবের বাইরে এক সপ্তাহে/একসাথে দুই ছবির মুক্তি কি চলচ্চিত্রের যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে না?
এই বিষয়টা আমারও কাম্য নয়। চলচ্চিত্রে সুদিন ফেরাতে যখন ইন্ডাস্ট্রির মানুষের প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছে, তখন এই রকম কিছু বিষয়ে আমাদের আরও বেশি ভাবার দরকার। সরকারও উদ্যোগী হয়েছে। যেহেতু দর্শক কমে গেছে তাই উৎসবের বাইরে একসাথে দুই ছবির মুক্তি দর্শকদের ভাগ করে দিচ্ছে। ঠিক তেমনি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রযোজক। অন্তত লগ্নিকারকদের কথা ভেবে হলেও এটা আমাদের কাম্য নয়।