গত ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি শিক্ষা বোর্ডের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা পাসের দাবিতে গতকাল সংশ্লিষ্ট বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডে হামলা করেছেন। বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষ ভাঙচুর করতে গিয়ে দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কুমিল্লায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা সেখানকার শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটক ও বোর্ড চেয়ারম্যানের কার্যালয় ভবনের ফটক আটকে দিয়েছেন। আর চট্টগ্রাম ও যশোরে শিক্ষার্থীরা বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন বলে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে। প্রতিটি বোর্ডেই আন্দোলনকারীরা ফলাফল বাতিল করে সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। এদিকে, আন্দোলনকারীরা কোথাও কোথাও বোর্ড কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছেন। গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করে সরকার। ফল প্রকাশের পর গত কয়েকদিন ১০/১২ জন ফেল করা শিক্ষার্থী ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে বলে জানা গেছে। তবে গতকাল দুপুরে ২০/২৫ জন অনুত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রী সংগঠিত হয়ে বকশিবাজারে অবস্থিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের গেটে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে শিক্ষা বোর্ডের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে চেয়ারম্যানের কক্ষের চেয়ার, টেবিল, দরজা ভাঙচুর করেন। ছুড়ে মারেন বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফাইলপত্রও। শিক্ষার্থীদের এমন তা বে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো বোর্ডে। পরে বিকালে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের গেট তালাবদ্ধ করে ফের বিক্ষোভ করতে থাকেন। সন্ধ্যা ৭টায়ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটকে রেখে অটোপাস চেয়ে তারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এ বিষয়ে রাতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী অটোপাস চেয়ে দুপুর থেকে আন্দোলন করছিল। আন্দোলনের এক পর্যায়ে আমার কক্ষে গিয়ে ভাঙচুর করেছে। রাতেও চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক তপন কুমার। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। আন্দোলনকারীরা জানান, গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বাতিল করে সবাইকে পাস করিয়ে দিতে হবে। বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনে তারা বলেন, দুপুরে শিক্ষা বোর্ডে প্রবেশের সময় আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলায় প্রিয়াঙ্কা (১৮) ও জান্নাতুল (১৮) নামে দুজন আহত হওয়ার কথা জানান তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, সম্প্রতি প্রকাশিত ফলাফল বৈষম্যমূলক। সব কটি বিষয়ের ওপর সাবজেক্ট ম্যাপিং করে (অটোপাস) ফল প্রকাশ করতে শিক্ষা বোর্ডকে বলেছি আমরা। তারা বলেন, আমরা এসএসসির ফলাফল অনুযায়ী এইচএসসিতেও ফল চাই।
পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান : অটো পাস দাবিতে কিছু শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ-অবরোধের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। গত রাতে এ কথা জানান তিনি। আজ সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলেও জানান তপন কুমার সরকার।
চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার পদত্যাগ চেয়েছে। আমি পদত্যাগ করলে যদি তারা আন্দোলন স্থগিত করে তাহলে আমি পদত্যাগই করব। সোমবার পদত্যাগপত্র জমা দেব।
অটোপাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আমাদের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর নিচে তুলে ধরা হলো :
চট্টগ্রামে ফের আন্দোলন শিক্ষার্থীদের, অবরুদ্ধ কর্মকর্তারা : চট্টগ্রামে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা গতকালও শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে আন্দোলন করেছে। এ দিন বেলা ১১টা থেকে বোর্ডের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেন তারা। পরবর্তীতে বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিবের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় দাবি মেনে নেওয়া না হলে সড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানিয়েছে। এর আগেও তারা আন্দোলন করেছে। আজও (গতকাল) তারা আন্দোলন করেছে। তাদের যে দাবি তা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করব। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের যে ফলাফল দেওয়া হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট নই। আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। আমাদের দাবি একটাই, মাধ্যমিকের ফলাফল অনুযায়ী এইচএসসির ফলাফল দেওয়া হোক।
যশোরে বোর্ড ঘেরাও : যশোরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ মনগড়া ফলাফল প্রকাশ করেছে। যশোর বোর্ডের ইংরেজি প্রশ্ন সহজ হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে গণহারে ফেল করানো হয়েছে। সাবজেক্ট ম্যাপিংও সঠিকভাবে করা হয়নি। এ জন্য ফলাফল বাতিলের দাবিতে তারা স্মারকলিপিও দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল থেকে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ড ভবনের সামনে জড়ো হয়। তারা শিক্ষা বোর্ডের ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ফটকের তালা ভাঙার চেষ্টা করলে কর্তৃপক্ষ ফটক খুলে দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেও সমাধান হয়নি। শিক্ষার্থীরা ফলাফল বাতিল ও অটোপাসের দাবিতে স্মারকলিপিও দেয়।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফটকে তালা : অকৃতকার্য একদল শিক্ষার্থী গতকাল পাসের দাবিতে কুমিল্লা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা ঝুলায়। অবরুদ্ধ করে রাখে বোর্ড চেয়ারম্যান ড. নিজামুল করিমকে। বোর্ডের অধীন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বোর্ডের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটক ও চেয়ারম্যানের কার্যালল ভবনের ফটক আটকে দেয়। পরে বোর্ড চেয়ারম্যান ড. নিজামুল করিম শিক্ষার্থীদের দেওয়া লিখিত অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন বলে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের আশ্বাস দেন। তারা সেই আশ্বাস মেনে বোর্ডের প্রধান ফটকে এলে নিচে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা তা মেনে নেয়নি। এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি ফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে।’
আমরা তাদের দাবির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানাব। কিন্তু তারা তা না শুনেই ফটকের সামনে বসে আছে। তারা আজই সবাই ফল চায়। সবাই পাস চায়।’