বিতর্কিত তিন তালাক মামলায় রায়দান সামিয়ক স্থগিত রাখল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। গত ১১ মে থেকে ছয় দিন ধরে চলে এই মামলা, বৃহস্পতিবার ছিল শুনানির শেষ দিন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এই মামলায় দুই পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর বৃহস্পতিবার রায়দান স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত।
আশা করা হচ্ছে আগামী জুলাইয়ে এই মামলার রায় দিতে পারে শীর্ষ আদালত।
সংবিধান অনুসারে ‘তিন তালাক’ প্রথা বৈধ কি না তা নিয়ে গত ১১ মে ঐতিহাসিক শুনানি শুরু হয় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫ জন ভিন্ন ধর্মের বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে শুরু হয় শুনানি। প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর(শিখ) ছাড়াও এই বেঞ্চে আছেন ক্যুরিয়ান জোসেফ(খ্রিষ্টান), আর.এফ নারিম্যান(পার্সি), ইউ.ইউ ললিত(হিন্দু) এবং আব্দুল নাজির (মুসলিম)।
শুনানি চলাকালীন সময়ে তিন তালাক ইসলামের মূলগত বিশ্বাসের মধ্যে পড়ে কি না এবং তা মুসলিমদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কি না তা বিবেচনা করে দেখে আদালত। ছয়দিন ধরে এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকার, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ড, দ্য অল ইন্ডিয়া মুসলিম ওমেন পার্সনাল ল বোর্ড ছাড়াও বিভিন্ন পক্ষ অংশ নেয়। তিন তালাক প্রথা তুলের দেওয়ার আর্জি জানিয়ে যারা মামলা করেন তাদের কয়েকজনের বক্তব্যও শোনা হয়।
মামলার শুনানি চলাকালীন সময়ে মুসলিমদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের রাস্তা হিসাবে তিন তালাক প্রথা অত্যন্ত ‘জঘন্যতম’ বলে মন্তব্য করে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ। এই ধরনের প্রথা কোনভাবেই কাম্য নয় বলেও জানায় শীর্ষ আদালত।
আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে সিনিয়র আইনজীবী রাম জেঠমালানিও আদালতে জানান ‘একমাত্র পুরষরাই তিন তালাক দিতে পারেন, স্ত্রীরা নয়। এটা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা (সাম্যের অধিকার) ভঙ্গ করার সামিল। একতরফা ভাবে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা করাটা জঘন্য তাই, এটাকে এড়িয়ে চলাই উচিত’।
সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সিনিয়র আইনজীবী সালমান খুরশিদও এই প্রথার তুলে দেওয়ার পক্ষে প্রশ্ন করে বলেন নারীদেরও তিন তালাকের বিরোধিতায় ‘না’ বলার অধিকার থাকা উচিত।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ডের হয়ে আদালতে প্রশ্ন করতে গিয়ে মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন ‘যে প্রথা দীর্ঘ ১৪০০ বছর ধরে চলছে তাকে একদিনে ইসলাম বিরোধী বলা যায় না, কারণ তিন তালাক একটি বিশ্বাসের ব্যাপার।
দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও জানিয়ে দেওয়া হয় তিন তালাক সহ সব ধরনের বিবাহ বিচ্ছেদ আদালতে বাতিল হয়ে গেলে মুসলিমদের বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন আনা হবে।