মালয়েশিয়ার পেরাক রাজ্যে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৫ নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় আরও ৩৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আজ সোমবার ভোররাতে পেরাকের গেরিক শহরের তাসিক বান্দিং-এর কাছে ইস্ট-ওয়েস্ট হাইওয়েতে ইউনিভার্সিটি পেঙ্গিদিকান সুলতান ইদ্রিস (ইউপিএসআই)-এর শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাস এবং মিনিভ্যানের মধ্যে সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, বাসটি তেরেঙ্গানু রাজ্যের জেরতেহ থেকে ইউপিএসআই-এর প্রধান ক্যাম্পাস তানজুং মালিমের দিকে যাচ্ছিল।
গেরিক ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ স্টেশনের চার সদস্যের একটি দল প্রায় এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসটিকে উল্টে থাকতে দেখে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিনিভ্যানটি একটি খাদে পড়েছিল।
পেরাক ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ডিপার্টমেন্টের সহকারী অপারেশনস পরিচালক সাবারোজি নূর আহমদ জানান, দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছেন মোট ৪৮ জন। এদের মধ্যে ৪২ জন শিক্ষার্থী, ভ্যানে থাকা চারজন, একজন বাস চালক এবং একজন বাস সহকারী ছিলেন।
হুলু পেরাক সিভিল ডিফেন্স ফোর্সের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং আরও দুজন হাসপাতালে মারা যান। আহত ৩৩ জনের মধ্যে কারো হাত-পা ভেঙেছে আবার কারো সামান্য আঘাত লেগেছে।
সাবারোজি বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমরা দেখতে পাই যে কিছু ভুক্তভোগী নিজেরাই বাস থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন, কেউ কেউ ছিটকে পড়েছিলেন এবং অন্যরা ভেতরে আটকা পড়েছিলেন। তিনি আরও জানান, ছয়জন ভুক্তভোগীকে বাস থেকে বের করতে উদ্ধারকর্মীদের হাইড্রোলিক কাটিং টুল ব্যবহার করতে হয়েছে।
প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, বাসটি ভ্যানটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। পেরাক পুলিশের প্রধান নূর হিসাম নর্ডিন বলেছেন, কর্তৃপক্ষ বর্তমানে তদন্ত করছে যে দুর্ঘটনাটি মানবিক অবহেলা নাকি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটেছে।
ইউপিএসআই-এর ছাত্র বিষয়ক ও প্রাক্তন ছাত্র বিষয়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নোরখালিদ সালিমিন জানিয়েছেন, বাসের বেশিরভাগ যাত্রীই পার্শ্ববর্তী তেরেঙ্গানু রাজ্যের ছিলেন এবং তারা গত ৭ই জুন ঈদ উল আযহা উদযাপন শেষে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। অধ্যাপক নোরখালিদ জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাকে বলেন, তারা জেরতেহতে জড়ো হয়েছিলেন এবং নিজ নিজ শহরে উৎসবের ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য একটি ব্যক্তিগত বাস ভাড়া করেছিলেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি দুর্ঘটনার খবর শুনে ভুক্তভোগীদের সাহায্য করতে ছুটে এসেছিলেন, তিনি ঘটনাস্থলকে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং হৃদয় বিদারক বলে বর্ণনা করেছেন। রাজালি নামে পরিচিত এই ব্যক্তি বলেন, এটা ছিল মর্মান্তিক। কেউ কাঁদছিল, কেউ সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল এবং ধ্বংসাবশেষে আটকা পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। তিনি নিউ স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন, এমনও ছিল যারা বন্ধুদের 'শাহাদা' (ইসলামী বিশ্বাসের ঘোষণা) পাঠ করতে বলছিল, যদিও এটা স্পষ্ট ছিল যে তাদের বন্ধুরা ইতিমধ্যেই মারা গেছে।"
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তিনি উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভুক্তভোগী পরিবারগুলির জন্য উপযুক্ত সহায়তা সমন্বয় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ৯ই জুনের একটি ফেসবুক পোস্টে দাতুক সেরি আনোয়ার এবং তার স্ত্রী দাতুক সেরি ড. ওয়ান আজিজা ওয়ান ইসমাইল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা প্রার্থনা করি যে আপনারা এই বিশাল কঠিন পরিস্থিতিতে শক্তি ও ধৈর্য পাবেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল