দৈনন্দিন জীবনে মানুষ অনেক কথাই বলে। তবে অনেকে কথাবার্তায় সতর্ক নয়, বরং তারা এমন সব কথা বলে ফেলে, যা বলা অনুচিত। মহানবী (সা.) শব্দ-বাক্য প্রয়োগে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। নিম্নে নবীজি (সা.)-এর অপছন্দের কিছু বাক্য উল্লেখ করা হলো—
নবীজি (সা.)-এর অপছন্দের কথা
১. তিনি যেসব শব্দ ও বাক্য পছন্দ করতেন না তার একটি হচ্ছে, ‘খাবুসাত নাফসি’ অর্থ আমার চরিত্র নোংরা হয়ে গেছে।
এর পরিবর্তে তিনি ‘লাকিসাত নাফসি’ বলার উপদেশ দিয়েছেন। উভয় বাক্যের অর্থ কাছাকাছি। তা হচ্ছে অভ্যাস ও চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। নবী (সা.) খাবুসা শব্দটি প্রয়োগ করা অপছন্দ করেছেন।
কেননা তা কদর্য ও নোংরামির মাত্রাতিরিক্ত অর্থ প্রকাশ করে।
২. তিনি আঙুর ফলকে কারাম বলতেও নিষেধ করেছেন। কেননা কারাম অর্থ উদারতা, যা মুমিনের গুণ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) কাউকে ‘মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে’ বলতে নিষেধ করেছেন।
নবী করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি এরূপ বলল, মূলত সে-ই যেন লোকদের ধ্বংস করে দিল।
৩. একইভাবে ‘লোকেরা নষ্ট হয়ে গেছে, যুগ খারাপ হয়ে গেছে’ বলাও অপছন্দ করতেন তিনি।
৪. রাসুলে আকরাম (সা.) ‘আল্লাহ যা চান’ এবং ‘তুমি যা চাও’ বলতেও নিষেধ করেছেন। তিনি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল সে শিরক করল।’ এমনি শপথের মধ্যে এ কথাও বলা নিষিদ্ধ যে সে যদি এমন করে তাহলে ইহুদি হয়ে যাবে।
৫. তিনি বাদশাহকে মালিকুল মুলক তথা রাজাধিরাজ বলতে নিষেধ করেছেন। চাকর ও খাদেমকে আমার বান্দা বা আমার বান্দি বলতে নিষেধ করেছেন।
৬. বাতাসকে গালি দেওয়া, জ্বরকে দোষারোপ করা, মোরগকে গালি দেওয়ার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
আইয়ামে জাহেলিয়াত তথা অন্ধকার যুগের সব আহবান ও স্লোগানকে তিনি বর্জন করার আদেশ দিয়েছেন।
৭. মুসলিমদের গোত্র, বংশ ও জাতীয়তাবাদের দিকে আহবান করতে এবং এর ভিত্তিতে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন।
৮. মুসলমানকে গালি দেওয়া, তিনজন একসঙ্গে থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দুজন মিলে গোপনে আলাপ করতে নিষেধ করেছেন।
৯. তিনি নারীকে তার স্বামীর কাছে অন্য নারীর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন।
১০ তিনি ‘হে আল্লাহ! তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা করো’—এভাবে দোয়া করতে করতে নিষেধ করেছেন এবং আল্লাহর কাছে দৃঢ়তার সঙ্গে চাওয়ার আদেশ করেছেন।
১১. তিনি বেশি বেশি শপথ করা, আল্লাহর চেহারার উসিলায় কিছু চাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন।
১২. তিনি মদিনাকে ‘ইয়াসরিব’ বলতে নিষেধ করেছেন।
১৩. তিনি বিনা প্রয়োজনে কোনো লোককে এ কথা জিজ্ঞাসা করতে নিষেধ করেছেন যে কেন সে তাঁর স্ত্রীকে প্রহার করেছে। তবে প্রয়োজনবশত জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে।
১৪. আমি পূর্ণ রমজান মাস রোজা রেখেছি এবং পূর্ণরাত তাহাজ্জুদ পড়েছি—এজাতীয় কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
১৫. জোরপূর্বক আদায়কৃত সম্পদকে হক বা অধিকার বলা অন্যায়। আল্লাহর রাস্তায় ও আল্লাহর আনুগত্যে খরচ করার পর এ কথা বলা অন্যায় যে আমি এত এত সম্পদ নষ্ট করেছি, দুনিয়ায় আমি অনেক সম্পদ খরচ করেছি ইত্যাদি।
১৬. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যা কিছু হয়, তা মানুষের মাঝে বলে বেড়ানো নিষিদ্ধ। নির্বোধ ও রুচিহীন মানুষরাই এমনটি করে থাকে।
১৭. আমি, আমার, আমার কাছে ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করা থেকে সতর্ক থাকা উচিত। কেননা এই তিনটি শব্দ বলার কারণেই ইবলিস, ফেরাউন ও কারুন ধ্বংস হয়েছে। ইবলিস বলেছিল, ‘আমি তার (আদম) থেকে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে। আর তাকে সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে।’
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ১২)
আল্লাহ সবাইকে মন্দ শব্দ ও বাক্য পরিহার করার তাওফিক দিন। আমিন।
—জাদুল মাআদ অবলম্বনে
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন