আবারও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, পাকিস্তান, চীনের মতো ভারতের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে আছে নেপাল ও ভুটান। এতে ভারতের সেভেন সিস্টার্সও থাকতে পারে এবং বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে সুবিধা ভাগাভাগি করে নিতে পারে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিএনএ টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারটির চৌম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পর লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে পেরেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডক্টর ইউনূস বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এটি কখনো সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এটাকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছি আমরা।
নিজেরা স্থির করা লক্ষ্যগুলো অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছাচ্ছি। একটি লক্ষ্য ছিল সংস্কার—অনেক কিছু সংস্কারের প্রয়োজন। কারণ আমাদের রাজনৈতিকব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা ইত্যাদিসহ যেসব ব্যবস্থা পেয়েছি তার সবই ছিল জালিয়াতির, সবকিছুর ছিল অপব্যবহার এবং শোষণ, যাতে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হয়। ওই সরকার এই সুযোগ নিয়েছে। পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কেউ অনির্দিষ্টকালের জন্য তর্ক করতে পারে যে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ—প্রথমে নির্বাচন, তারপরে সংস্কার। প্রথমে সংস্কার, তারপরে নির্বাচন। সম্ভবত এটিই একটি কারণ যার জন্য বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে তাৎক্ষণিক অগ্রগতির অভাব রয়েছে, যাঁরা আপনার সরকারে অবদান রাখছেন নির্বাচন কখন হবে এবং আপনি কী ধরনের নির্বাচন চান সে বিষয়ে এক ধরনের ঐক্যে পৌঁছতে। যদি আমরা নির্বাচন দিয়ে শুরু করি, তাহলে আমাদের সংস্কারের প্রয়োজন নেই, বিচারের প্রয়োজন নেই।
কারণ আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন হলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। তাহলে সবকিছু নির্বাচিতদের হাতে চলে যাবে। কল্পনা করুন, অন্য দুটি কাজ না করেই আপনার নির্বাচন হয়েছে। তারপর আপনি আবার সেই পুরনো সমস্যায় ফিরে যাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বের করে দেওয়ার জন্য আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াব না। আমরা (ভারতকে) বলেছি, তোমরা তাঁকে রাখতে পারো। আমাদের বিচার চলবে। বিচারই তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ করবে। কিন্তু বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার কোনো সুযোগ কাউকে দেওয়া উচিত নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের তুলনায় পিছিয়ে গেছে ভারতের সম্পর্ক— এমন প্রশ্নের জবাবে ডক্টর ইউনূস বলেন, পাকিস্তান, চীনও ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আমরা কখনো বলিনি যে, আমরা ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই না। শুধু বলছি সমস্যাগুলো কী? আমরা ব্যাখ্যা করেছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এত বিস্তৃত অর্থনীতি, যা আমরা গড়ে তুলতে পারি। কারণ আমরা নেপাল এবং ভুটানকে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আনতে পারি এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্স বা সাতটি রাজ্যও এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকতে পারে। কারণ আমরা বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে একই সুবিধা ভাগ করে নিতে পারি।
নতুন সরকার টেকসই হবে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য আপনি পর্যাপ্ত সংস্কার করেছেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারছি না যে এটাই রাজনীতি, এটা কিভাবে হবে। এটা রাজনীতিবিদদের কাজ। আমার কাজ হলো একটি শালীন, গ্রহণযোগ্য, পরিষ্কার, উপভোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। যাঁরা ভোটার তাঁরা সবাই তাঁদের ভোট দিতে পারেন। কারণ আমাদের ভোটাররা ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারেননি।