বাংলাদেশের ফুটবলে মেয়েদের টুর্নামেন্ট সামনে এলেই আরও একটা ট্রফির আশা জেগে ওঠে সমর্থকদের মনে। গত প্রায় এক দশক ধরে ফুটবলে নানা ট্রফি উপহার দিচ্ছেন নারী ফুটবলাররা। কখনো বয়সভিত্তিক পর্যায়ে, কখনোবা জাতীয় দলের জার্সিতে। বিশেষ করে সাফ অঞ্চলে বাংলাদেশের মেয়েদের অর্জন ঈর্ষণীয়। সিনিয়র লেভেলে দক্ষিণ এশিয়ায় টানা দুবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা। অনূর্ধ্ব-২০ বা তার নিচের লেভেলের মেয়েদের প্রতিযোগিতায় সাতবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছে বাংলাদেশ। সাফল্যের এ ধারাতেই প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন আফঈদারা। আরও একটি মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সামনে। আগামী ২০ আগস্ট থেকে ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চাংলিমিঠাঙ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ ছাড়াও এ টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে ভারত, নেপাল ও স্বাগতিক ভুটান। আজ সাফের বয়সভিত্তিক এ টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছেন নারী ফুটবলাররা। যাত্রার আগে জানিয়ে গেলেন আরও একটি ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার দৃঢ় প্রত্যয়।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ প্রতিযোগিতা এর আগে একবার হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সেই প্রতিযোগিতায় অতিথি হিসেবে খেলেছিল রাশিয়ার মেয়েরা। চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল তারাই। বাংলাদেশ হয়েছিলেন রানারআপ। চার ম্যাচের দুটিতে জয় ও একটিতে ড্র করেছিলেন সাগরিকারা। গত বছর নেপালের ললিতপুরে অবস্থিত আনফা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয় সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন অর্পিতা বিশ্বাসরা। লিগ ম্যাচে তিনটাতেই জয় পান তারা। ফাইনালে পরাজিত করেন ভারতকে। গত বছর নেপালে সেই টুর্নামেন্ট খেলা চ্যাম্পিয়ন দলের বেশ কয়েকজন আছেন এবারের অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অর্পিতা বিশ্বাস। এ ছাড়াও সৌরভী আকন্দ প্রীতি, আলপি আক্তার, ক্রানুচিঙ মারমা, ফাতেমা আক্তার এবং থুইনুই মারমারাও ভুটান যাচ্ছেন আরও একটা ট্রফি জয়ের আশায়। এ দলে অন্তত সাতজন ফুটবলার আছেন, যাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। পাঁচজন ফুটবলার একেবারেই নতুন। বাকিরা বিভিন্ন দলে খেলেছেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দলের কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু। এ সময় পাশে ছিলেন বাফুফের নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ এবং অধিনায়ক অর্পিতা বিশ্বাসও।
কোচ লিটু বলছিলেন দলের সম্ভাবনার কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি দেশবাসীকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। তবে শুরুতে কেবল ম্যাচ বাই ম্যাচ নিয়ে ভাবব আমরা।’ অধিনায়ক অর্পিতাও কোচের মতো একই কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বেশ কয়েকজন ফুটবলার আছেন। পাশাপাশি যোগ হয়েছেন নতুন কয়েকজন। তারাও খুবই ভালো মানের ফুটবলার। সবাইকে নিয়ে আমরা খুবই ব্যালেন্সড একটা দল।’ এ দল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রেরণা কোথায় পাচ্ছেন অর্পিতারা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র আপুরা ভালো করছে। আমরা নিজেদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করেছি। আপুদের মতোই আমাদেরও ভালো করতে হবে। এটা কোনো চাপ নয়, আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’
মেয়েদের ফুটবলে কোচ হিসেবে কাজ করছেন ইংল্যান্ডের পিটার বাটলার। কিছুদিন আগে তার অধীনে খেলেই সিনিয়র ও অনূর্ধ্ব-২০ লেভেলে এএফসি নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। তিনি কেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলের সঙ্গে ভুটান যাচ্ছেন না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘পিটারের সঙ্গে আমাদের আগেই কথা হয়েছে। তিনি অনূর্ধ্ব-১৭ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করবেন না। তবে আমাদের স্থানীয় কোচরা পিটারের নির্দেশনা মেনেই অনুশীলন পরিচালনা করেছেন। পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রেও পিটারের ভূমিকা আছে।’ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বয়সভিত্তিক দল নিয়ে আমাদের ভালো কাজ হচ্ছে। এখানে পরিশ্রম করে আমরা জাতীয় দলের জন্য ভালো মানের ফুটবলার তৈরি করতে চাই।’ ভুটান থেকে ট্রফি নিয়ে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন কোচ ও ফুটবলাররা। পাশাপাশি চাইলেন দেশবাসীর দোয়া।
অনূর্ধ্ব-১৭ দলের স্কোয়াড
ইয়ারজান বেগম, মেঘলা রানী, মমিতা খাতুন, শিউলি রায়, তানিয়া আক্তার, অর্পিতা বিশ্বাস (অধিনায়ক), ফাতেমা আক্তার, উম্মে কুলসুম, আরিফা আক্তার, আলমিনা, রেশমি আক্তার, থুইনুই মারমা, সৌরভী আকন্দ প্রীতি, ক্রানুচিঙ মারমা, রিয়া, আলপি আক্তার, প্রতিমা রানী, জবা রানী, সুরভী রানী, মামনি চাকমা, ইশিতা ত্রিপুরা, পূর্ণিমা মারমা ও আমেনা খাতুন।