বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জাতীয় সংগীতে বদল চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দ্রুত সাড়া পেয়ে উৎফুল্ল বিজেপি নেতা ও রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
সোমবার এক টুইটবার্তায় তিনি লেখেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘জন গণ মন’ গানটির মূল সংস্করণের পরিবর্তে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (আইএনএ) সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গৃহীত সংস্করণটি জাতীয় সংগীত করতে হবে। আইএনএর ‘জন গণ মন’ গানের সংস্করণটি অনেক বেশি দেশাত্মবোধক ও নির্ভুল। গণপরিষদে রাজেন্দ্র প্রসাদ ঘোষণা করেছিলেন, এর শব্দ সংশোধন করা যেতে পারে।
এর আগে, গত ১ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লেখেন এ বিজেপি নেতা। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
দেশের জাতীয় সংগীত ‘জন গণ মন’ নিয়ে সুব্রহ্মণ্যমের আপত্তি কেন? প্রবীণ এই বিজেপি সংসদ সদস্যের দাবি, শুধু তার নয়, দেশের যুব সমাজের বড় অংশের মনের কথা বলছেন তিনি। তার আপত্তির অন্যতম শব্দটি হল জাতীয় সংগীতে ‘সিন্ধু’ শব্দটির ব্যবহার।
স্বামীর মতে, বর্তমান জাতীয় সংগীতের কিছু কিছু শব্দ (সিন্ধু) অনাবশ্যক দ্বন্দ্ব তৈরি করে। বিশেষ করে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে। রবীন্দ্রনাথের ‘জন গণ মন’র শব্দ বদলে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ)-র গাওয়া ‘জন গণ মন’র আদলে লেখা অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় সংগীত ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম পংক্তি ‘শুভ সুখ চ্যান’ গানটি ব্যবহারের পক্ষে তিনি।
ইতিহাস বলছে, ১৯৪৩-এ সুভাষ বসুর নির্দেশে আইএনএ’র দুই সদস্য মুমতাজ হোসেন এবং কর্নেল আবিদ হাসান সাফরানি গানটি লিখেছিলেন। সুর দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রাম সিংহ ঠাকুর। সুরের প্রভেদ বিশেষ অবশ্য ছিল না।
রবীন্দ্রনাথের ‘জন গণ মন’র প্রথম পংক্তিটি জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় এবং তাতে ৫২ সেকেন্ড সময় লাগে। পক্ষান্তরে আইএনএ’র ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম পংক্তিটি গাইতে সময় লাগে ৫৫ সেকেন্ড। জাতীয় সংগীতের শব্দ বদল প্রসঙ্গে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেছেন স্বামী। তা হলো, ১৯৪৯ সালে রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, জাতীয় সংগীতের শব্দ পরিবর্তন বা সংশোধন করা যেতে পারে।
কিন্তু তাতেও স্বামীর সমস্যা মিটছে কই? যে ‘সিন্ধু’ শব্দটি নিয়ে স্বামীর আপত্তি, আইএনএ’র গাওয়া গানে তো তার উল্লেখ রয়েছে। তা ছাড়া, ‘সিন্ধু’ শব্দটি বাদ দিলে আরএসএসের অখণ্ড ভারতের তত্ত্বই যে প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকে।
তার আশা, ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করবে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু ভোটের আগে এই ঝুঁকি নেবে তো তার দল?
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন