ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে জার্মানিতে বেড়েছে জীবনযাত্রায় ব্যয়। এই পরিস্থিতিতে জনগণের আর্থিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে নয়
ইউরোতে মাসিক পরিবহন টিকিট চালু করতে যাচ্ছে জার্মান সরকার।
জুন থেকে শুরু হয়ে আগামী তিন মাসের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষে এ বিষয়ে বিল পাস হয়।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী জুন, জুলাই এবং আগস্ট এই তিন মাস জার্মান নাগরিকরা এবং দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশিরা নয় ইউরো ব্যয়ে টিকিট কাটতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য যাত্রীকে খরচ করতে হবে ২৭ ইউরো। দেশটিতে ভ্রমণরত পর্যটকরাও এই সুবিধা পাবেন।
আর এই টিকিট ব্যবহার করে যাত্রীরা শহর ও অঞ্চলভিত্তিক যেকোনো গণপরিবহনসেবা নিতে পারবেন। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই টিকিট ব্যবহার করে একজন যাত্রী জার্মানির যেকোনো প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারবেন।
এই প্যাকেজেটিতে সরকারের অতিরিক্ত ২৫০ কোটি ইউরো খরচ গুণতে হবে। যুদ্ধের কারণে চলমান জ্বালানি তেলের সংকটের সময়ে এমন সুবিধা দিয়ে সরকার জনগণকে গণপরিবহনে উৎসাহিত করতে চাইছে যা অনেক বেশি পরিবেশবান্ধবও।
পরিবহনমন্ত্রী ফোলকার ভিসিং বলেন, যারা গণপরিবহন ব্যবহার করেন তাদের সবাই রাশিয়ার থেকে আসা তেলের উপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। সেই সাথে পরিবেশের সুরক্ষায়ও তারা অবদান রাখছেন।
জার্মানিতে রেলওয়ের প্রসারে কাজ করছেন জন ভোর্থ। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, এমন উদ্যোগের ফলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে জনগণকে অনুপ্রাণিত করবে।
তবে দেশটির পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, এমন উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে খুব বেশি উদ্ধুদ্ধ নাও হতে পারেন। জার্মান ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র হুবের্টা সাসের বলেন, মানুষকে গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে রেলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিবহন সেবার সংখ্যা বাড়ানো এবং বিভিন্ন জায়গায় যেতে প্রয়োজনীয় পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
শুধু শহরের মানুষই উপকার পাবে?
জার্মানির রেল সার্ভিস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীরা অভিযোগ করছেন। যাত্রীরা বলছেন, রেলে প্রচুর ভিড় থাকে, সেবার মান দুর্বল, সময়মতো ট্রেন আসে না এবং প্রায়ই শিডিউল বিপর্যয় ঘটে।
তবে রেলের মুখপাত্র মারিয়া মেনজ ডয়চে ভেলেক বলেন, তারা রেলের আধুনিকায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন। আধুনিকায়নের এই চেষ্টার এবং নয় ইউরোর টিকিটের সুযোগ যাত্রীদের রেল ব্যবহারে আকৃষ্ট করতে পারে।
তবে মাসিক নয় ইউরোর এই সুবিধা যাত্রীদের আগ্রহী করে তুলবে কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এআরডির এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৪৪ শতাংশ লোক বলছেন তারা এই টিকিট ব্যবহার করতে চান বা করার সম্ভাবনা আছে। আর শহরের শতকরা ৬০ ভাগ লোক এমন সেবা পেতে চান। সেই তুলনায় গ্রামের বাসিন্দাদের শতকরা ৪০ ভাগ এমন সুবিধা ভোগ করতে আগ্রহী।
বলা হচ্ছে যে, গ্রাম ও শহরতলীর বাসিন্দাদের শহরের তুলনায় গণপরিবহন ব্যবহারের খুব একটা সুযোগ নেই। আর এ কারণে তারা নিজেদের গাড়িতে যাতায়াত করতে পছন্দ করেন।
আর এসব কিছুর পর যে উদ্বেগ রয়েছে তা হলো তিন মাস পর এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী৷
ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার জনগণের পরিবহন খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছিল।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে এবং তেলের দাম বেড়েছে। আর দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় বা অর্থ মন্ত্রণালয় কেউই অবশ্য নয় ইউরোর টিকিটের এই সুবিধার বিষয়ে খুব একটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।
সূত্র: ডয়চে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন