বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

চসিক পরিচালনা সহজ করে দিয়ে গেলাম : নাছির

চসিক পরিচালনা সহজ করে দিয়ে গেলাম : নাছির

চসিকের বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নতুন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সহযোগিতায় পাশে থাকার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিদায়বেলায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘চসিক পরিচালনা সহজ করে দিয়ে গেলাম। এটাই বড় সফলতা।’ তিনি বলেন, ৩১ বছর ধরে অর্গানোগ্রাম না থাকায় চসিকে  দক্ষ জনশক্তির যে অভাব ছিল, প্রবিধানমালা অনুমোদনে সংকট কেটে গেছে। কর্মপরিবেশ এসেছে। একটি সিস্টেমে এসেছে চসিক। ই-টেন্ডার চালু, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ বহুমুখী পরিবর্তন করে  গেলাম। আর এর সবটুকুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উদার সহযোগিতায়। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী গতকাল ছিল মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছিরের শেষ কর্মদিবস। পাঁচ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন ও সেবা খাতের প্রকল্প কাজ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ কাজ বিগত ৪০ বছরেও হয়নি।’ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নগরে বাস টার্মিনাল, স্লটার হাউস নির্মাণসহ বহুল প্রতীক্ষিত প্রকল্প নেন নাছির। বন্দর শহরকে বদলে দেওয়ার প্রত্যয়ে গ্রিন সিটি-ক্লিন সিটি করার প্রতিশ্রুতিতে বিলবোর্ড উচ্ছেদে অভাবনীয় সাহসী অভিযানে প্রশংসিত হন। আ জ ম নাছির বলেন, চসিকের আবশ্যিক কাজ ও ইশতেহারের লক্ষ্যপূরণের বাইরেও ব্যাপকভিত্তিক কাজ করি। চেষ্টার ত্রুটি বা আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না। যেসব আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করেছি, সেসবের সুফল পাওয়া যাবে সামনের দিনে। অনেক সমালোচনার পরও পুনর্মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে কর আদায় বাড়িয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী কর আদায় : যেমন, চট্টগ্রাম বন্দরের যথাক্রমে ১০৭ কোটি ও রেলওয়ের ৩০ কোটি টাকাসহ বিপুল নগর শুল্ক আদায় হয়েছে। করের আওতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে গরিব নিম্নআয়ের মানুষকে। 

বঙ্গবন্ধুর বৃহত্তম ভাস্কর্য নির্মাণ, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে ‘রুপালি গিটার’ ভাস্কর্য স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধ ও মনীষী স্মারক স্থাপন, জাতীয় পর্যায়ের একুশে বইমেলা চালু, মুক্তিযোদ্ধা ও সেবকদের আবাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পাশে ছিলেন তিনি। উন্নয়ন বরাদ্দে কমিশন আদায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললে প্রভাবশালীদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। তবে সাধারণ মানুষের সমর্থন পান।

চট্টগ্রামের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে নগরজুড়ে প্রায় চার হাজার বিলবোর্ড, ইউনিপোল, মেগা সাইন উচ্ছেদ করেন আ জ ম নাছির। রাজস্ব ফাঁকির রাস্তা বন্ধ করে লুটেরাদের বিরুদ্ধে যেন সাহসী বার্তা দেন তিনি। বিজ্ঞাপন নীতিমালা তৈরি করেন। ডাম্পিং স্টেশন কমিয়ে আনা, দিনের পরিবর্তে রাতে ময়লা ফেলার পরিবহন কাজ চালু করেন। প্রকল্পটির আওতায় বাসাবাড়ি, শিক্ষাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহে বিনামূল্যে দেন ৯ লাখ ছোট বিন ও ৩ হাজার ৪৩০টি বড় বিন। সরাসরি ময়লা সংগ্রহ করেন চসিক কর্মীরা। সড়ককে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পও হয়। শহরের তিন-চতুর্থাংশ কাঁচা রাস্তাকে পাকা করা হয়। সুইমিং পুল, মুক্তমঞ্চও করেন প্রতিকূলতা মাড়িয়েই। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে টেকসই উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বন্দরের অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পরিকল্পনা যত বিস্তৃত হবে, ততই শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের জন্যই মঙ্গল। আ জ ম নাছির চান, মরণ এলেও শেষ বিদায়ের কালে জানাজায় যেন মানুষেরই কাতার দীর্ঘ হয়।

সর্বশেষ খবর