মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পর চলতি বছরেও প্রায় সাড়ে আট মাস বন্ধ থাকে। বছরের শুরুতেই ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা না নিয়েই পরীক্ষার্থীদের অটো পাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া আবশ্যিক বিষয়গুলো বাদ দিয়ে মাত্র তিনটি নৈর্ব্যচনিক বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও পুরোদমে ক্লাস হয়নি। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী আর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ব্যতিত অন্যদের ক্লাস চলে সপ্তাহে মাত্র এক থেকে দুই দিন। তবে শিশুশ্রেণির ক্লাস বন্ধ থাকে পুরো বছর। শিশুশ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে এক দিনও স্কুলে যেতে পারেনি। বছরের শেষ পর্যায়েও স্বাভাবিক হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম। বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের প্রথমে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। শেষ দিকে সরাসরি ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও গণপরিবহনে হাফভাড়া আন্দোলনেও চলতি বছর সরব ছিল শিক্ষার্থীরা।
তথ্যমতে, করোনা মহামারীর কারণে নেওয়া হয়নি গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষা ছাড়াই অটো পাস দিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় ফল। জেএসসি/সমমান এবং এসএসসি/সমমান পরীক্ষার ফলাফলের গড় মানের ভিত্তিতে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে জেএসসির ২৫ শতাংশ এবং এসএসসির ৭৫ শতাংশ গড় নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ফলে শতভাগ শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। এরমধ্যে জিপিএ ৫ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ শিক্ষার্থীকে, যা ২০১৯ সালের ফলের তুলনায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৫২১টি বেশি। পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাসে মূল্যায়ন করায় তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার। বাতিল করা হয় প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষাও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে প্রমোশন দিয়েছে। বাতিল হয়েছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষাও। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকায় চলতি বছরে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আয়োজন করা হয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার। বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ আবশ্যিক কোনো বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সংক্ষিপ্ত এসব পরীক্ষাও নেওয়া হয় সময় এবং নম্বর কমিয়ে। গ্রুপভিত্তিক (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যসহ অন্যান্য গ্রুপ) মাত্র তিনটি নৈর্ব্যচনিক বিষয়ে এসব পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো গুচ্ছপদ্ধতিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী দেশের সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ রাখার পর গত ২৬ আগস্ট দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। ১৫ অক্টোবরের পর ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে শুরু করে। যদিও এখনো কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হাইব্রিড মোডে (অনলাইন ও সরাসরি) মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। এদিকে, গত জুলাইয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ও অভিভাভবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর মধ্যকার ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ফোনালাপে অধ্যক্ষ অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পাশাপাশি হুমকি দিয়ে কামরুন নাহার বলেন, ‘আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি।’ এ কথোপকথন নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছে। গত নভেম্বরে রামপুরায় বাসচাপায় একরামুন্নেসা বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাঈনুদ্দিন মাহিন ও সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজছাত্র নাঈম হাসান নিহত হয়। গণপরিবহনে হাফ ভাড়া চালু, সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচারসহ নানা দাবিতে কয়েক দফায় রাস্তায় আন্দোলনে সরব ছিল শিক্ষার্থীরা।