বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শ্রমিক সংকটে চা উৎপাদনে ভাটা

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

শ্রমিক সংকটে চা উৎপাদনে ভাটা

পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ অনুকূল আবহাওয়া, শ্রমিক ধর্মঘটের অবসানের পরও ২০২২ সালে চা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বলা হচ্ছে- আগস্টে প্রায় এক মাস ধরে শ্রমিক ধর্মঘটের জের টানছে চা শিল্প। চা উৎপাদনেও ওই ধর্মঘটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২০ সালে দেশের ১৬৭টি চা বাগান থেকে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয় ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি চা। ২০২১ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি। সদ্যসমাপ্ত ২০২২ সালে ১০ কোটি কেজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। নভেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয় ৮ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা। এই হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১ কোটি ৪ লাখ ৫৪ হাজার কেজি, ২০২১ সালে ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৬ হাজার কেজি চা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। কিন্তু ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা কম উৎপাদিত হয়েছে। সর্বশেষ মাসের হিসাব এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া যায়নি। চা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বছরের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়। এই তিন মাসকে ‘টপ পিক’ হিসেবে ধরা হয়। শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য ওই সময়কে বেছে নেন। ওরা আন্দোলনে সফল হলেও উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চা খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেখানে আগের দুই বছর কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫-২০% চা বেশি উৎপাদিত হয়েছে, সেখানে ২০২২ অর্থবছরে এসে নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১০-১২% ঘাটতি রয়ে গেছে। পরের এক মাসে এ ঘাটতি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর ঘাটতি যদি পূরণও হয় তবুও আগের বছরের তুলনায় কম চা উৎপাদন হবে।

টি ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, গত বছর সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও উৎপাদন উপযোগী পরিবেশ বজায় থাকায় দেশের বাগানগুলোতে চা উৎপাদনের অতীত সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু গত আগস্টে দেশের চা বাগানগুলোতে টানা শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে পাঁচ-ছয়টি নিলামে চা সরবরাহে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছিল বাগানগুলো। পরে শ্রমিক সংকট সমাধানের পর বছরের শেষদিকে উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা বাড়ে। এতে আন্তর্জাতিক নিলামগুলোতে চায়ের সরবরাহ বেড়ে যায়। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে উৎপাদনের পরিমাণে যে ঘাটতি ছিল সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।

দেশের শীর্ষস্থানীয় চা ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চা উৎপাদনে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি মূলত শ্রমিক সংকটেরই জের। শ্রমিক ধর্মঘটের আগে এবং পরে উৎপাদনে যে নেতিবাচক ধারা তৈরি হয় বছর শেষে তার প্রভাব উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পড়েছে।

সর্বশেষ খবর