রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের আশঙ্কায় আগামী চার বছরের মধ্যে বড় ধরনের প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে জার্মানি। এ লক্ষ্যে দেশটি তাদের পুরোনো বাঙ্কার বা বোমা প্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সংস্কার এবং নতুন আশ্রয় তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে।
জার্মানির ফেডারেল সিভিল প্রটেকশন এজেন্সির ( বিবিকে) প্রধান রালফ টাইসলার জানান, অনেক বছর ধরে জার্মানরা বিশ্বাস করত যে তাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে জার্মানি কোনো বড় ধরনের যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়।
বর্তমানে জার্মানিতে প্রায় ২,০০০টি বাঙ্কার বা আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৫৮০টি ব্যবহার উপযোগী। এসব আশ্রয়ে জায়গা হবে প্রায় ৪.৮ লাখ মানুষের—যা দেশের মোট জনসংখ্যার শুধু ০.৫ শতাংশ। অথচ ফিনল্যান্ডে রয়েছে ৫০,০০০টি আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে ৮৫ শতাংশ নাগরিক আশ্রয় নিতে পারবে।
টাইসলার আরও জানান, কেবল নতুন বাঙ্কার নির্মাণ যথেষ্ট নয়। কারণ এতে অনেক সময় ও অর্থ লাগবে। তাই আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজ, সাবওয়ে স্টেশন, পার্কিং লট কিংবা সরকারি ভবনের বেজমেন্ট দ্রুত ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
এই কাজে দ্রুত অগ্রসর হতে তিনি জাতীয় পর্যায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা চেয়েছেন, যেন ১০ লাখ মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা যায়।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং সম্প্রতি খারকিভ শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশকেই চিন্তিত করে তুলেছে। এসব কারণেই জার্মানির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের চাপ বেড়েছে।
বাঙ্কার সংস্কার ও নতুন আশ্রয় তৈরি করতে টাইসলার জানিয়েছেন, আগামী চার বছরে প্রয়োজন অন্তত ১০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা), এবং আগামী এক দশকে এই খাতে ব্যয় হতে পারে ৩০ বিলিয়ন ইউরো। যদিও সরকার এখনো পুরোপুরি অর্থ বরাদ্দ দেয়নি, তবে সাম্প্রতিক বাজেট ছাড়ে এটি সম্ভব হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া জরুরি মুহূর্তে জনগণ যেন সহজে কোথায় আশ্রয় নেবে তা জানাতে ডিজিটাল অ্যাপ, রাস্তার সাইনবোর্ড, সতর্কবার্তা বাজানোর ব্যবস্থা ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন টাইসলার।
তিনি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ঘরে অন্তত ১০ দিনের খাবার, পানি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রাখতে। তবে কেউ যদি অন্তত ৭২ ঘণ্টার জন্য প্রস্তুত থাকে, তাও অনেক কাজে আসবে বলে জানান তিনি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল