ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগপন্থি এক ঠিকাদারের বিলের তদবির করতে এসে জনতার হাতে আটক হয়েছেন বরিশালের দুই সমন্বয়ক। গতকাল বিকালে ঝালকাঠি এলজিইডিতে এ ঘটনা ঘটে। আটক দুই সমন্বয়ক হলেন সদ্যবিলুপ্ত হওয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব ও আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম (২৪) ও বরিশাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র মো. মেহেদী (২৫)। সিরাজুল ইসলাম ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দোগলচিড়া গ্রামের নুরুল বাশারের ছেলে এবং মেহেদী বরিশল শহরের কাকলীর মোড়ের মো. কালামের ছেলে। এলজিইডি অফিস সূত্র ও উপস্থিত ঠিকাদাররা জানান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর কম্পিউটার অপারেট শাওন খানের ৩ কোটির টাকার ব্রিজ ও সড়কে কাজের চূড়ান্ত বিল তুলতে বরিশালের দুই সমন্বয়ক নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলীকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। একপর্যায়ে তারা উপজেলা প্রকৌশলীকে বিল ছাড়ানোর জন্য ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
রাজি না হওয়ায় প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়মের অভিযোগ দেন। সর্বশেষ গতকাল দুপুর ২টায় তারা ঝালকাঠি এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বিল না দেওয়ার কৈফিয়ত চান। এ সময় সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপস্থিত বিএনপিপন্থি ঠিকাদাররা দুই সমন্বয়ককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা দুই সমন্বয়ক সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীরের ঘুষ ও দুর্নীতির বিষয়ে আমরা নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এ সময় উপস্থিত ঠিকাদাররা মব সৃষ্টি করে আমাদের পুলিশে ধরিয়ে দেন।’
ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এলজিইডিতে দুই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক চাঁদাবাজির ঘটনায় আটক হয়েছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের দুজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানান, সমন্বয়করা তাদের অনৈতিকভাবে হয়রানি করে আসছিল। আজ (গতকাল) একটি কাজের বিল তুলে নিতে নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসে গিয়েছিল। এনিয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে ঝামেলা হলে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে আমি মামলা নেব।
এদিকে, নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবীর বলেন, বরিশালের দুই সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর স্টাফ শাওনের পক্ষে ৩ কোটি টাকার একটি কাজের চূড়ান্ত বিল ছাড়িয়ে নিতে আসে। কাজ শেষ না হওয়ায় এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিল না করায় প্রকৃত ঠিকদারকে নিয়ে আসতে বলি। প্রকৃত ঠিকাদারকে না নিয়ে তারা কিছু ছেলেপেলে নিয়ে এসে বারবার চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিক, স্থানীয় ছাত্রদল ও ছাত্র সম্বয়কদের বিষয়টি জানিয়েছি। ঠিকাদার ছাড়া বিল কীভাবে দেব? একপর্যায়ে তারা এ বিল ছাড়ানোর জন্য ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি রাজি না হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে হয়রানি করে আসছিল। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।