বেলারুশের রাজধানী মিনস্ক থেকে কিছুটা দূরে যুদ্ধের আবহ। আকাশে উড়ছে সুখোই-৩৪ বোমারু বিমান, পড়ছে গাইডেড বোমা। বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে চারপাশ। ঘন ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে গেছে পুরো আকাশ। চারিদিকে মর্টার ও কামানের গোলায় কান পাতা দায়। হেলিকপ্টার, গানশিপগুলোও আক্রমণে যোগ দিয়েছে, আর ড্রোন দিয়ে চলছে নজরদারি।
তবে এটি কোনো আসল যুদ্ধ নয়। এটি একটি সামরিক মহড়া। এটি হলো বরিসভস্কি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বেলারুশ ও রাশিয়ার সেনারা যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে।
মহড়াটির নাম 'জাপাদ-২০২৫', অর্থাৎ 'পশ্চিম-২০২৫'। এই ধরনের মহড়া প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়। মস্কো ও মিনস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে এই মহড়া পুরোপুরি প্রতিরক্ষামূলক। উদ্দেশ্য রাশিয়া ও বেলারুশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও হাঙ্গেরিসহ ২৩টি দেশের সামরিক প্রতিনিধিদের এই মহড়া পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী মেজর জেনারেল ভ্যালেরি রেভেঙ্কো সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কাউকে হুমকি দিচ্ছি না। আমরা গঠনমূলক ও বাস্তবসম্মত আলোচনার পক্ষে।
কিন্তু পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এতে মোটেও সন্তুষ্ট নন। তিনি এই মহড়াকে 'অত্যন্ত আগ্রাসী' বলে বর্ণনা করেছেন। মহড়ার আগেই পোল্যান্ড বেলারুশের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়।
এই 'জাপাদ-২০২৫' মহড়া এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনা চরমে। গত সপ্তাহে পোল্যান্ড অভিযোগ করে যে একটি রুশ ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। ন্যাটো এর জবাবে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে কিছু ড্রোন ভূপাতিত করে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে রোমানিয়ার আকাশসীমাতেও। ইউরোপীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন যে এই ধরনের ড্রোন অনুপ্রবেশ কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি কৌশল। এটি দিয়ে রাশিয়া ইউরোপীয় নেতাদের ঐক্য ও ন্যাটোর দৃঢ়তা পরীক্ষা করতে চাইছে।
এই মহড়া আয়োজনের মধ্য দিয়ে বেলারুশ ও রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বকে বিশেষ করে ইউরোপকে একটি বার্তা দিতে চাইছে। বরিসভস্কি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এই গোলাগুলির শব্দ ও বিস্ফোরণের মধ্যে সেই বার্তাটিই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে: দেখুন, আপনাদের দোরগোড়ায় কী পরিমাণ সামরিক শক্তি প্রস্তুত। মস্কোর সঙ্গে সংঘাত আপনাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল