আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। তিনি উপজেলা বিএনপিরও আহ্বায়ক।
বিগত সরকারের শেষ সময়ে ‘আয়নাঘরে’ বন্দি থাকা মাজেদকে ৩০ মিনিট সময় বেঁধে দিয়ে গুলি করে হত্যার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর মুক্ত হয়ে এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তিনি ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে শুরু করেছেন নির্বাচনী প্রচারণা।
ওয়ান ইলেভেনের সময় রাজনীতিতে আসা মাজেদ বাবুর প্রায় ১৯ বছরের পথচলা মোটেও মসৃণ ছিল না। বিএনপির দুর্দিনে তিনি ছিলেন রাজপথের ত্যাগের প্রতিচ্ছবি, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার আলোকবর্তিকা। নেতৃত্বের স্বমহিমায় নিজেকে নিজেই ছাড়িয়ে গেছেন বারংবার। জাতীয়তাবাদী পরিবারের ছায়াতলে আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরেছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে অসংখ্য মামলা, হামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাল হয়ে। যে কারণে একাধিকবার মাজেদ বাবুর বাসায় হামলা-ভাঙচুর করেছে পতিত স্বৈরাচার বাহিনী।
গত বছরের ৩০ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবুকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। সিটিটিসির (পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) একটি দল তাঁকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে তুলে কথিত আয়নাঘরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আটকে রেখে তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গুমের পর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে দেওয়া অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।
বেঁচে ফেরা অনিশ্চিত থাকা লুৎফুল্লাহেল মাজেদ এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত দলীয় নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই নেতাকর্মীরা এলাকাটিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মিছিল ও ফেসবুকেও পোস্ট করেন।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাদের সংসদীয় আসনে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ জনপদের বঞ্চিত মানুষ এবার লুৎফুল্লাহেল মাজেদ ভাইকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আমরা আশা করছি।
ময়মনসিংহ-৮ আসনে ধানের শীষ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেন, আমাকে চোখ বেঁধে বাসা থেকে আয়নাঘরে নিয়ে মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে আমাকে গুলি করে হত্যা করে আন্দোলনকারীদের গুলিতে আমার মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার আলাপ করা হচ্ছিল। এর ভেতরে বলতে হবে আন্দোলনের জন্য কাদেরকে টাকা দিয়েছি। সে সময় উত্তরা থানা পুড়িয়ে দেওয়ার খবরে কিছুটা পিছপা হয়। এরপর আমাকে প্রচণ্ড নির্যাতন চালায়। নির্যাতন শেষে আমাকে একটি স্টেটমেন্টে স্বাক্ষর করায়, সেখানে বলা হয় আমার নেতৃত্বে উত্তরা পূর্ব থানা পোড়ানো হয়েছে। সাংবাদিকরা আসলে যেন আমি বলি আমি ফান্ডিং করেছে, এবং আরও কয়েকজনের নাম বলে দেয় তাদের নাম বলতে বলা হয়। আয়নাঘর থেকে বেঁচে ফেরত আসতে পারবো তা সে সময়ে কল্পনা করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতীয়তাবাদী দলে আমার যাত্রা শুরু হয়। মামলা, হামলা এবং আয়নাঘরে নির্যাতিত হয়েও শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হইনি। রাজনীতি করে আমার নেওয়ার কিছু নেই। আমার লক্ষ্য একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে ঈশ্বরগঞ্জকে আধুনিক ও সমৃদ্ধশালী উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা। আমার নেতা তারেক রহমান যে আত্মবিশ্বাসে আমাকে ময়মনসিংহ-৮ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মনোনীত করেছেন আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বরগঞ্জের মানুষ তার প্রতিফলন ঘটাবে আমাগী জাতীয় নির্বাচনে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত